• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় নারীসহ ৬ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন


FavIcon
অমর চাঁদ গুপ্ত অপু, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) :
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২২, ০৩:৩৭ পিএম
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় নারীসহ ৬ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় নারীসহ ৬ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন

১১ দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর চাঞ্চল্যকর দুইটি হত্যাকা- মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে একজন নারীসহ ৬ জনের মৃত্যুদ-, ৪ জনের যাবজ্জীবন, একজনের আমৃত্যু কারাদ- এবং একজনের ১০ বছরের সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক।

গত সোমবার (২৩ মে) বিকেলে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান ম-ল ফুলবাড়ীর জয়নগর গড়পিংলাইয়ের হুমায়ুম কবীর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে তিনজনের মৃত্যুদ- এবং চারজনের যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেছেন। 

মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিনজন হলেন, ফুলবাড়ী উপজেলার ৬নং দৌলপুর ইউনিয়নের গরপিংলাই গ্রামের তাসের উদ্দিনের ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪৩), আজাহার আলীর ছেলে রেজাউল করিম বাবু (৪৮) ও আজিজ সিদ্দিকীর ছেলে আতোয়ার ওরফে আতর আলী (৫১)। যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত চারজন হলেন, আতোয়ার আলীর ছেলে গোলাম রব্বানী (৪৪) ও একরামুল হক (৫১), মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে সাঈদ আলী (৫৮) ও ইদ্রিস আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৪)।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- এবং অপর এক ধারায় আসামিদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন বছর সশ্রম কারাদ- দেন বিচারক।

আদালতের সহকারি সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল মামলার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

২০০৯ সালের ২০ আগস্ট সন্ধ্যায় ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গরপিংলাই গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির তার মুদি দোকান থেকে জয়নগর বাজারের যাওয়ার জন্য বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরিদিন জয়নগরস্থ এমআইবি নামক ইটভাটার সামনে ইটের স্তূপের নিচে হুমায়ুন কবিরের রক্তমাখা লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়। পএ ঘটনায় ওইদিনই নিহত হুমায়ুম কবিরের বড়ভাই তৌহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের তদন্তকারি কর্মকর্তা।

এ ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গত সোমবার (২৩ মে) আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা সবাই নিহত হুমায়ন কবিরের চাচা সাইফুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিসের ভাই ও ভাতিজা।

এদিকে, এর আগে গত ১১ মে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার দক্ষিণ সুজাপুর গ্রামের আলোচিত গৃহবধূ তপতি রানী চৌধুরী হত্যা মামলায় নিহতের সতিনসহ তিনজনের মৃত্যুদ-, স্বামীকে আমৃত্যু কারাদ- এবং অপর একজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ-ের রায় প্রদান করেন দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আদালতের বিচারক এস এম রেজাউল বারী।
মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন, নিহত তপতি রানী চৌধুরীর সতিন সাধনা নন্দ চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রতিমা রানী চৌধুরী (৪৫), প্রতিমা রানী চৌধুরীর ছেলে আকাশ চৌধুরী (২৭) ও পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মহন্তের ছেলে কাজল মোহন্ত (৩১)। আমৃত্যুকারাদ-ে দ-িত হয়েছেন নিহতের স্বামী সাধনা নন্দ চৌধুরী (৬৩) এবং ১০ বছর সশ্রম কারাদ-প্রাপ্ত হলেন, চকচকা গ্রামের রবীন্দ্র নাথ দাসের ছেলে জীবন চন্দ্র দাস (৩০)। জীবন চন্দ্র দাসকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো ছয় মাসের সশ্রম কারাদ- ভোগ করতে হবে।

সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের এমন রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, দক্ষিণ সুজাপুর গ্রামের মৃত বিবেকা নন্দ চৌধুরীর ছেলে সাধনানন্দ চৌধুরী তার প্রথম স্ত্রী তপতি রানী চৌধুরীর সঙ্গে সংসার চলাকালীন ২০১৪ সালে প্রতিমা রানী চৌধুরীকে বিয়ে করেন। এরপর থেকেই তপতী রানী চৌধুরীকে আলাদা করে রাখতেন এবং ভরণপোষণ দিতেন না। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের কলহ হতো। ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল রাত ৯টার পর থেকে স্বামী, সতিন ও সতিনের ছেলেসহ পাঁচজন মিলে তপতী রানীর ওপর শারীরিক নির্যাতনসহ তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে মরদেহ পৌর এলাকার উত্তর কৃষ্ণপুর গ্রামের একটি বাঁশবাগানে নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন আলামত নষ্টের চেষ্টা করেন।

এ ঘটনায় নিহত তপতি রানী চৌধুরী একমাত্র ছেলে শুভ নন্দ চৌধুরী বাদী হয়ে ফুলবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলার চার আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে ২২ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ১১ মে এ রায় ঘোষণা করেন বিজ্ঞ আদালত। 
 


Side banner
Link copied!