• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২

পদ্মা সেতু সংযোগ সড়ক, দুনীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে সরকারি টাকা হরিলুট


FavIcon
নুরুজ্জামান শেখ, শরীয়তপুরঃ
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
পদ্মা সেতু সংযোগ সড়ক, দুনীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে সরকারি টাকা হরিলুট

শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের নির্মাণ কাজ ভুমি জটিলতার কারনে দীর্ঘ চার বছরেও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু সংযোগ) সড়কের একটি অংশের জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে বিতর্ক। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা একটি চক্রকে সহায়তা করে অবৈধভাবে নতুন করে নির্মিত স্থাপনাগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে করেও অতিরিক্ত প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয় হবে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই এলাকার অবৈধ স্থাপনা শনাক্ত করে সেগুলোকে ‘জনস্বার্থবিরোধী’ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল তৎকালীন জেলা প্রশাসন। সেই স্থাপনাগুলোর মূল্য নির্ধারণের জন্য সম্প্রতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদুল আলম গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগের নিকট নতুন করে তালিকা পাঠিয়েছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের আশঙ্কা, এই স্থাপনাগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয় হবে।

শরীয়তপুর সওজ ও জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার তথ্য সুত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ২০২০ সালে ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়ক নির্মাণ করতে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ সালে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। শরীয়তপুর সদর, নড়িয়া ও জাজিরা এলাকায় ২২টি ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত মামলার (এলএ কেইস) মাধ্যমে প্রায় ২৪০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ওই সময় জমিতে কী কী স্থাপনা আছে,তা নিশ্চিত করতে ভিডিও চিত্র ধারণ করে জেলা প্রশাসন ও শরীয়তপুর জেলা সড়ক বিভাগ।

৫ বছরে ২১টি এল এ কেইস এর মধ্যে ১৬টি এলএ কেইসের জমি সওজকে হস্থান্তর করা হয়। তিনটি প্যাকেজে সড়ক নির্মাণ চলমান রয়েছে। শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস এলাকা থেকে জাজিরা কলেজ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ১২ কিলোমিটারের কাজ শেষ। কিন্তু জাজিরার ঢালীকান্দি ও মতিসাগর এলাকায় ২ কিলোমিটার এলাকার কাজ বন্ধ রয়েছে। কারণ, ১৬ নম্বর এলএ কেসে জমি হন্তান্তর করা হয়নি। গত ২ বছরে ও এল এ কেইস ১৫ তে মাত্র আমরা ৭ ধারা নোটিশ দেওয়া হয়েছে ।

 ২০২১ সালে ভূমিমালিকদের ৪ ধারা অনুযায়ী নোটিশ দেওয়া হলে একটি চক্র বেশি ক্ষতিপূরণের আশায় অবৈধভাবে নতুন করে রাস্তার দুই পাশে ঘরবাড়ি নির্মাণ শুরু করে।

 সড়ক বিভাগ সুত্রে যানাযায়, জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের প্রতিনিধিরা সেখানে যৌথ তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের স্থাপনা-ঘরবাড়ি ও গাছপালার তালিকা করেন। ওই তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০২৩ সালে অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তারা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের আশায় নির্মাণ করা স্থাপনা বাদ দিয়ে প্রকৃত তালিকা মূল্য নির্ধারণের জন্য গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগে পাঠায়। আর বাদ দেওয়া স্থাপনাগুলোকে ‘জনস্বার্থবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

 

কিন্তু ওই স্থাপনার মালিকেরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করেন। এরপর একটি চক্র শরীয়তপুর জেলা ভুমি অধিগ্রহণ শাখার অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যমে সেই স্থাপনাগুলো তালিকাভুক্ত করায়। সম্প্রতি ওই আবেদনগুলো আমলে নিয়ে ৩৯টি স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় অধিগ্রহণ শাখা।

 

২০ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদুল আলম গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগকে পুনরায় মূল্য নির্ধারণের তালিকা পাঠিয়েছেন। অভিযোগ হলো, এই নতুন তালিকায় অবৈধ স্থাপনাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অধিগ্রহণ শাখা ও সওজের কাছ থেকে ৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সংগ্রহ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সড়কের পূর্ব পাশে বসতি আর পশ্চিমে নিচু কৃষিজমি। যেখানে ফাঁকা জমি দেখা গেছে, বর্তমানে সেখানে কাঠের ও টিনের ঘর দাঁড়িয়ে আছে। বেশির ভাগ ঘর তালাবদ্ধ, কেউ বসবাস করে না, মালামালও নেই।

মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ঘর কাঠের পাটাতনের ওপর বসানো। পুরোনো ঘর এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।

 

মতিসাগর এলাকার কাজী নজরুল ইসলামের ঘরটি নতুন তালিকায় ‘মুরগির খামার’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো মুরগি নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মুরগির খামারি। বাড়ির পাশে নিজেদের জমিতে খামার করেছি। সেই খামারের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, তাই ক্ষতিপূরণ পাব।’

ঢালীকান্দির চাঁন মিয়া শিকদার ২০ বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে তাঁর কোনো ঘর ছিল না। কিন্তু তাঁর জমিতে একটি দালাল চক্র তিনটি ঘর নির্মাণ করে ক্ষতিপূরণের তালিকায় টেনে এনেছে। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সওজের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থাপনার ক্ষতিপূরণের একটি ইস্যু দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এখন তা নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে কিছু নতুন স্থাপনা যুক্ত করা হয়েছে। যার জন্য অতিরিক্ত প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

 

অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদুল আলম বলেন, আমাদের কাজির হাট এলাকায় অধিগ্রহনের সময় ৫৯ জনের ৭ ধারা নোটিশের বিরোদ্ধে আপত্বি ছিল। আমরা যাচাই বাছাই শেষে সম্প্রতি ৩৯ জনের আবেদন মুঞ্জুর করে মুল্য নির্ধারনের জন্য গণপুর্ত ও বন বিভাগের নিকট প্রেরন করেছি। ৬ নং এল এ কেইসের বিপরীতে উচ্চ আদালতের ৩ টি রিট থাকায় সে গুলো নিস্পত্তি করা যাচ্ছে না। 

শরীয়তপুরের সড়ক ও জন পথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল আহামেদ বলেন, পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের ২৭ কিলোমিটার কাজের মধ্যে ৪ কিলোমিটার রাস্তা অধিগ্রহনের জন্য করা যাচ্ছে না। পূর্বে যে ভিডিও ধারন করা হয়েছিল সেটি সঠিক হয়নি। এ সকল কারনে কাজ আরো বিলম্ভিত হবে। গত দু বছরেও ১৫নং এল এ কেইসের তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি।


Side banner

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর

Link copied!