• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের কারখানায় লোডশেডিং না করার সুপারিশ


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২২, ০১:৫১ পিএম
নিত্যপণ্যের কারখানায় লোডশেডিং না করার সুপারিশ
ছবি - সংগৃহীত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে নেয়া লোডশেডিং সিদ্ধান্তে অস্থির হয়ে উঠতে পারে নিত্যপণ্যের বাজার। কমে যেতে পারে সব ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন। এতে তৈরি হতে পারে বড় ধরনের সরবরাহ সংকট। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে নতুন করে বাড়তে পারে এসব নিত্যপণ্যের দাম।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশে অনেক আগেই আমদানি ব্যয় বেড়ে মূল্যস্ফীতি যোগ হয়েছে। তার প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতায়। এখন সারা দেশে লোডশেডিংয়ের বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ভোক্তাকে সহনীয় দাম ও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আরেক দফা অনিশ্চয়তায় ফেলবে।

সময় থাকতেই এ ধরনের সংকট ও শঙ্কা এড়াতে চায় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানকে লোডশেডিংয়ের আওতার বাইরে রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছে এ মন্ত্রণালয়।
উপসচিব খন্দকার নুরুল হক স্বাক্ষরিত ওই সুপারিশ-সংবলিত একটি চিঠি গত সপ্তাহে পাঠানো হয়েছে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমানের কাছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে গত ১৯ জুলাই দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আশু সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে এবং ভোক্তার মধ্যে স্বস্তি ফেরাতে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী গ্রাহকদের প্রতিষ্ঠানে লোডশেডিং না করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সুপারিশ অমূলক নয়, আমরা চেষ্টা করছি সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের কার্যক্রমের বাইরে রাখার। অর্থাৎ সব শিল্পকেই যতটুকু সম্ভব কম লোডশেডিং দেয়ার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য এসব পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানাকে যতটুকু সম্ভব লোডশেডিংয়ের বাইরে রাখতে অগ্রাধিকারমূলক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সম্প্রতি সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যয় সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে শোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
খাতসংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, এ লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তের পর উদ্বেগ জানিয়ে করণীয় ঠিক করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানায় ‘বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।
তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সারা দেশে চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেল (সয়াবিন/পাম অয়েল ও সানফ্লাওয়ার) চিনি, লবণ, আটা ময়দাসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকে।
সারা দেশে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে ভোক্তার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকে। এখন এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে উৎপাদন হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে সময়মতো বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ সংকট দেখার আশঙ্কা রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলোর তথ্যমতে, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন চিঠি ও আশঙ্কার বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সভা ডাকেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
ওই সভায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা হয়, স্বাভাবিক সময়েই যেখানে এসব অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাত পরিস্থিতি নিয়ে সারা বছর হইচই লেগেই থাকে, সেখানে লোডশেডিংয়ের মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সব ধরনের নিত্যপণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কাটিও অমূলক নয়।
তেমন কিছু ঘটলে এই সংকটময় সময়ে, বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সরকারের ভেতরে এবং ভোক্তাসাধারণের মধ্যে নেতিবাচক কথাবার্তা শুনতে হবে। একই সঙ্গে বাজার অস্থিরতার সম্পূর্ণ দায়ও নিতে হবে।
সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এসব নিত্যপণ্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানাগুলোকে লোডশেডিংয়ের বাইরে রাখতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়। যার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকেও।
 


Side banner
Link copied!