• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্বশুর-শাশুড়িকে খুশি করতে পারলেই পুরস্কার


FavIcon
টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১, ০৯:০৭ পিএম
শ্বশুর-শাশুড়িকে খুশি করতে পারলেই পুরস্কার
শ্বশুর-শাশুড়িকে খুশি করতে পারলেই পুরস্কার

বৃদ্ধকালে পুত্রবধূ ও পুত্র দেখভাল না করায় শ্বশুর-শাশুড়িকে খুব কষ্টে দিন পার করতে হয়। আবার অনেকেই শ্বশুর-শাশুড়িকে বোঝা মনে করায় বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই পৃথক হয়ে যায়।ফলে না খেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে চলে অনেকের জীবন। অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে থাকলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না শেষ জীবনে। অপরদিকে পুত্রবধূর অত্যাচারে অনেক শ্বশুর-শাশুড়িকে বৃদ্ধকাল কাটাতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে।বর্তমান সমাজে সিংহভাগ শ্বশুর-শাশুড়ি অবহেলিত। পুত্রবধূ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো মেনে না নেওয়ায় পরিবারে ঝগড়া ও অশান্তি লেগেই থাকে। আবার অপরদিকে কিছু শ্বশুর-শাশুড়ি তার ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মতো সহ্য করতে না পারায় বাড়িতে বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ লেগেই থাকে। এতে পরিবারে শান্তি ফিরে আসে না।তাই প্রতিটি পরিবারে শান্তি ফেরাতে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করলেই উপহার পাচ্ছেন পুত্রবধূরা। এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন। তিনি নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন পুত্রবধূদের হাতে।এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগের জন্য অসংখ্য মানুষ মোশারফ হোসেনকে মোবাইল ফোনে উৎসাহ অভিনন্দন জানাচ্ছেন।টাঙ্গাইল সদর থানা গেটের সামনে সম্প্রতি ওসি মীর মোশারফ হোসেন দুটি ফেস্টুন লাগিয়েছেন। তাতে লেখা রয়েছে- ‘বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস। পুত্রবধূ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরস্কার প্রদান করবেন। শ্বশুর-শাশুড়িকে যে সেবা করবে এবং একসঙ্গে বসবাস করবে সেই ভাগ্যবতীকে পুরস্কৃত করা হবে।পুরস্কার গ্রহণের জন্য তার মোবাইল নম্বরও দেওয়া আছে সেখানে।জানা যায়, বুধবার বিকাল পর্যন্ত গত দুই দিনে সদর উপজেলার সাবালিয়া এলাকার তামান্না জাহান মিতু, পারভিন খান, থানাপাড়া এলাকার মির্জা সায়মা, আদি টাঙ্গাইলের সৈয়দ সুমাইয়া পারভিন, আকুরটাকুরপাড়া এলাকার মাহমুদা রহমান ও উম্মে সাদিকা, কলেজপাড়ার শিউলি আক্তারসহ আটজনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে তিনি দিচ্ছেন টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, পোড়াবাড়ির চমচম ও ক্রেস্ট। সেই সঙ্গে পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।সাবালিয়া এলাকার পুত্রবধূ তামান্না জাহান মিতু বলেন, যে দিন থেকে স্বামীর ঘরে এসেছি সেদিন থেকে আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো মেনে নিয়েছি। তারও আমাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন। আল্লাহর রহমতে তাদের নিয়ে খুব শান্তিতে আছি। পুলিশ কর্মকর্তার পুরস্কার পেয়ে আমি আরও উৎসাহ পেলাম।একই এলাকার পারভীন খান বলেন, এক সময়ে আমি শাশুড়ি হব। সেই চিন্তা করেই বিয়ের পর থেকে শ্বশুর-শাশুড়িকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। কোনো পুরস্কার পাওয়ার আশায় তাদের সম্মান করিনি। আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার আসায় সম্মান করি। ওসির পুরস্কার পেয়ে আমি খুব আনন্দিত।শহরের থানাপাড়া এলাকার মির্জা সায়মা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাসায় এসে পুরস্কার দিয়ে গেছেন। পুরস্কার পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে।তামান্না জাহান মিতুর শ্বশুর আবু সাইদ বলেন, আমার ছেলের বউ আমাদের দু'জনকে খুব সম্মান করে ভালোবাসে। আমরাও তাকে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করি। আমার পুত্রবধূর মতো সবাই করলে বৃদ্ধকালে কাউকে আর বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হবে না।ওসি মীর মোশারফ হোসেন বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় বাবা ও মা অযত্নে জীবনযাপন করেন। অনেকেই ঠিকমতো খাবারও পায় না। আর্থিক অবস্থা ভালো সন্তানেরা বাবা-মাকে ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা বসবাস করে। অনেক সন্তানই ভুলে যায় এই বাবা-মা দিনরাত পরিশ্রম করে সন্তানের মুখে আহার তুলে দেন এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তারা এও ভুলে যায় তাদের একদিন বৃদ্ধ হতে হবে।তিনি বলেন, অনেক সন্তান কাজের প্রয়োজনে বাইরে ব্যস্ত থাকে। তাদের বাবা-মা পুত্রবধূর কাছে বেশি সময় কাটায়। আমার উদ্দেশ্য ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা। যাদের দেখে অন্য পুত্রবধূরাও তার শ্বশুর-শাশুড়িকে সম্মান করবেন।তিনি আরও বলেন, যারা বাবা-মাকে ছেড়ে দূরে চলে যায় এবং অনেকের একাধিক সন্তান থাকার কারণে বাবা-মাকে ভরণপোষণ নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দূরে সরিয়ে দেয়- সেসব সন্তান ও পুত্রবধূর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ এ আয়োজন করেছি; যাতে কোনো বাবা-মাকে অবহেলা ও বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।

 

 


Side banner
Link copied!