• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে পরিবেশ বিধ্বংসী অপকীর্তি ও বিনষ্ট কাজ অবলীলাক্রমে ঘটছে


FavIcon
মোঃ রহমত আলী (হবিগঞ্জ প্রতিনিধি) :
প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২১, ১০:০৫ এএম
হবিগঞ্জে পরিবেশ বিধ্বংসী অপকীর্তি ও বিনষ্ট কাজ অবলীলাক্রমে ঘটছে
হবিগঞ্জে পরিবেশ বিধ্বংসী অপকীর্তি ও বিনষ্ট কাজ অবলীলাক্রমে ঘটছে

বর্তমানে হবিগঞ্জে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। ব্যক্তি-গোষ্ঠী পর্যায়ে পরিবেশ বিনষ্ট তৎপরতা ও অসেচতনতা উদ্বেগজনক। নদী, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয়, দখল-দূষণ ভরাট, পাহাড়-টিলা কাটা, কৃষি জমি বিনষ্ট, শিল্পদূষণ, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস ইত্যাদি পরিবেশগত সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। পরিবেশ বিধ্বংসী অপকীর্তি ও বিনষ্ট কাজ অবলীলাক্রমে ঘটছে। যদি আমরা হবিগঞ্জকে মানুষের বাসযোগ্য রাখতে চাই, এই শহরকে স্বাস্থ্যকর নগরী হিসেবে দেখতে চাই তাহলে পরিবেশ বিধ্বংসী তৎপরতা এখনি রোধ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মোঃ ইকরামুল ওয়াদুদ ও সাধারণ সম্পাদক, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল সংবাদপত্রে প্রেরিত বিবৃতিতে উপরোক্ত কথা বলেন।
বিবৃতিতে বলেন, হবিগঞ্জের সকলেই জানেন, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদীটি বর্তমানে চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে। নদীটি কি পরিমাণ বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে তা আমরা টের পাই বর্ষা মৌসুমে। প্রতি বছরই খোয়াই নদীতে বান দেখা দেয়। এসময় শহরবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মানুষকে চরম উৎকন্ঠা-উদ্বেগের মধ্যে দিনরাত কাটাতে হয়। খোয়াই নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে অবাধে চলে বালু-মাটি উত্তোলন। অর্থলোলুপরা প্রভাব খাটিয়ে নদীর তীর ও নদী অভ্যন্তর অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে বালু-মাটি  উত্তোলনের কারনে নদী ও নদীর তীর হয়ে পড়েছে হুমকির মুখে। অপরিকল্পিত বালু-মাটি তোলার কারণে এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে গরুর বাজার নৌকাঘাট। শহর থেকে নদীর তলদেশ প্রায় ১২/১৫ ফুট উঁচু হয়ে উঠেছে। এতে নদীতে ঘিরে থাকা শহর হয়েছে হুমকির সস্মুখীন আর নদীর অপর পাড়ের গ্রাম ও ফসলি জমিকে সহ্য করতে হচ্ছে ভাঙ্গনের আঘাত।আর ভাঙ্গন মানেই হাজার হাজার একর জমির ফসলহানি আর হাজারও মানুষের দুর্ভোগ। 

তারা বলেন, উজানে ভারত সরকারের পানি সীমিতকরণ, দেশের অভ্যন্তরে খোয়াই নদীর উপর নানাবিধ অত্যাচার, খনন না হওয়া, ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ ইত্যাদি কারণে নদীটির ধারা দিনদিন ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই নদীর উপর নির্ভরশীল জেলার কৃষি ও বাণিজ্যের বিশাল একটি অংশ। যুগ যুগ ধরে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষের পরিকল্পনাহীনতা ও জনসাধারণের অসচেতনতার কারণে খোয়াইয়ের নাব্যতা কমে গেছে। নদীটি দূষণের শিকার হয়ে হবিগঞ্জের পরিবেশ ও নদীনির্ভর জীবনযাত্রাকে বিপণ্ন করে তুলেছে। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছর ধরে খোয়াই ব্রীজের তলায় ও এর আশপাশে পৌরসভার বজর্য ফেলার কারণে নদীর পানি দুর্গন্ধপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 

পুরাতন খোয়াই নদী প্রসঙ্গে বলা হয়, এই নদীর বর্তমান চিত্রটি রীতিমত আঁৎকে ওঠার মত। সরকারী-বেসরকারী নানান ধরণের স্থাপনা নদীটিকে গিলে খাচ্ছে। বাপা, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারসহ নাগরিক সমাজ ২০০৬ সাল থেকে দখলমুক্ত করে নদীটিকে স্বাভাবিক প্রবাহে ফিরিয়ে আনার কথা বলে আসছে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুরাতন খোয়াই নদী রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঐ কমিটির উদ্যোগে পুরাতন খোয়াইয়ের একাংশের অবৈধ দখলের সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয় এবং একই বছর নদীর একাংশে উভয়দিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও খননের জন্য একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করে। এই প্রকল্পটি যথাযথ না হওয়ায় ফেরত আসে এবং ২০১৫ সালে আবারো প্রকল্প তৈরী করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা প্রশাসন নদীটি দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করে। মাছুলিয়া থেকে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় ১ কিঃ মিঃ এলাকা থেকে ৫ শতাধিকের অধিক বেসরকারী স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় এবং জেলা প্রশাসনের আহ্বানে কিছু স্থাপনা স্ব-উদ্যোগে দখলদাররা সরিয়ে নেয়। নদীটি দখলমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ওই সময়ের  প্রশাসনকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু হবিগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবী পুরাতন খোয়াই উচ্ছেদ কার্যক্রম ভাটা পড়াতে ইতিমধ্যেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে পূর্ণাঙ্গ নদীটি দখলমুক্ত করার ব্যাপারে। 

একই সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড হবিগঞ্জ “খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প” নামে ১৯৫৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প  গ্রহণ করে । যার মধ্যে পুরাতন খোয়াই নদীর একাংশ (২৩শ ১৫ মিটার) সংরক্ষণ ও  সৌন্দর্যের জন্য ৮৯ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা যায়। সম্প্রতি মূল প্রকল্প থেকে পুরাতন খোয়াই নদীর অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে বলে আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যা আমাদের বিস্মিত করেছে। যেকোন নগরে বারিপাত অঞ্চল বা ‘রিটেনশনপন্ড’ হচ্ছে ওই নগরে অবস্থিত প্রাকৃতিক জলাশয়সমূহ। হবিগঞ্জ শহরের জন্য তাই পুরাতন খোয়াই নদীসহ অন্যান্য হুমকির মুখে থাকা প্রাকৃতিক জলাশয় পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত ও পুনরুদ্ধার করা প্রশাসনের নৈতিক, আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বর্তমান প্রশাসন (মাছুলিয়া থকে বগলা বাজারের মাছ বাজার পর্যন্ত) সম্পূর্ণ নদীটি নির্মোহ সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে আগামী বর্ষার আগেই পুনরুদ্ধার করে হবিগঞ্জবাসীকে জলাবদ্ধতা ও কৃত্রিম বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং একই সাথে মাছুলিয়া থেকে শায়েস্তানগর পর্যন্ত উচ্ছেদকৃত অংশ দ্রুত খননের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

আমাদের নিজেদের রক্ষার জন্য, হবিগঞ্জকে বাসযোগ্য ও স্বাস্থ্যকর জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এখনই খোয়াই, পুরাতন খোয়াইসহ অন্যান্য নদী-জলাশয়ের সুস্থ স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন। 


Side banner
Link copied!