মেজর (অব.) সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় বরখাস্ত হওয়া কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি করণের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুদক। চুমকি গৃহিণী হয়েও কোটিপতি বলে প্রমাণ মেলেছে দুদক।বুধবার(২৮ জুলাই) দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহামুদুল হক বলেন, ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ অভিযাগপত্র দাখিল করা হয়। তবে করোনার সময়ে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির জন্য এখনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।দুদকের আইনজীবী মাহামুদুল হক আরও জানান, দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রে ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি করণ গৃহিণী হয়েও তার নামে চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটা ও ষোলশহরে দুটি বাড়ি আছে বলে দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া, কক্সবাজারে ফ্ল্যাট, চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর ওসি প্রদীপের নামে জায়গা, একাধিক বাড়িসহ নানা স্থাপনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে ওসি প্রদীপের ব্যক্তিগত দুটি প্রাইভেটকার, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একাধিক ব্যাংক হিসাবে নানা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে।দুদকের আইনজীবী জানান, ওসি প্রদীপ মেজর সিনহা হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তার স্ত্রী চুমকি করণ পলাতক রয়েছেন। দুদক তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছে।
গত বছরের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় ২ নম্বর আসামি। মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে।এরপর আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিনজন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডটিকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জন আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। আত্মসমর্পণের পর কনস্টেবল সাগর দেবকে কারাগারে পাঠান আদালত।কারাগারে থাকা অন্য ১৪ আসামি হলেন—বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।এ ছাড়া ঘটনার সময় মেজর সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা যে নীলিমা বিচ রিসোর্টে ছিলেন, সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নূরকে আটক করে। পরে তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়।শিপ্রা দেবনাথকে রামু থানায় করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। আর সিফাতকে টেকনাফ থানায় করা হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার দুটি মামলা ও রামু থানায় করা মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সিফাত, শিপ্রা ও তাহসিন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাঁদের নিয়ে সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন।
৯ আগস্ট শিপ্রা ও ১০ আগস্ট সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেন কক্সবাজারের আদালত। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। পরে ১৩ ডিসেম্বর এই দুই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বিমান চন্দ্র কর্মকার রামু ও টেকনাফ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের দায়ের করা দুই মাদক মামলার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :