• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে ৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার অভিযোগ


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২২, ০১:৩৯ পিএম
ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে ৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার অভিযোগ
ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাঠ সহকারীদের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বেনামে ৭০০ ব্যক্তিকে অন্তত ৫ কোটি টাকা উদ্যোক্তা ঋণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ অডিটকালে বিষয়টি নজরে আসে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের কমলনগরে যোগদানের দুই বছর আগে তার স্বাক্ষর-সিল জাল করে এ ঋণ দেওয়া হয়।

বিষয়টি ৬ এপ্রিল ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক লিখিতভাবে জানালে তদন্তের নির্দেশ দেন ইউএনও।
লিখিত অভিযোগে আরও জানা যায়, মাঠ সহকারীদের খামখেয়ালি ও অনিয়মের কারণে ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। সাবেক ব্যবস্থাপক ও কম্পিউটার অপারেটরের যোগসাজশে বিতরণ করা খেলাপি গ্রাহকদের অধিকাংশই মাঠ সহকারীদের আত্মীয়-স্বজন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। এরমধ্যে তারা কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এবং অডিট চলাকালে তড়িঘড়ি করে হিসাবে ৪২ লাখ ৬০ টাকা মাঠ সহকারীরা জমা দেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজিরহাট ইউনিয়নের মাঠ সহকারী ইশতিয়াক হোসেন, চরমার্টিনের আবুল কালাম, চর লরেন্সের মাইন উদ্দিন, চরকালকিনির কামাল উদ্দিন, পাটারির হাটের আবদুল খালেক সুমন, চরকাদিরার ইসমাইল হোসেন ও শামিম হাসান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ঋণ অনুমোদন করানোর অভিযোগ রয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে নামমাত্র কিছু (৫০-৫০০) টাকা নিজেরাই বেনামে সঞ্চয় জমা দিয়ে ভুয়া সমিতি গঠন করেন। এক্ষেত্রে নদীভাঙা মানুষের নাম-পরিচয় ব্যবহার করা হলেও তারা জানেনই না।

পরবর্তীতে ওইসব সমিতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়। একেকটি সমিতির গ্রাহক থাকে ২০-৬০ জন। একেকজনকে ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। তবে এখানে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মাঠ সহকারীদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা ঋণের টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করার অন্তত ১৫টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা জানান, কমলনগরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর যোগদান করেন। অথচ ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর, ১২ ডিসেম্বর ও ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন সময়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ ফরমে কামরুজ্জামানের সই ও সিল ব্যাবহার করা হয়। তার সই জাল করেই চরকালকিনির খানপাড়া সমিতির মো. ইউসুফকে ৫০ হাজার টাকা, চরলরেন্সের আলতাফ হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা ও তোরাবগঞ্জের নুর হোসেনকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এছাড়া ইউএনওর সই ছাড়াই মোস্তাফিজুর রহমান ফারুককে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তোরাবগঞ্জের আবদুল মালেককে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। সাবেক ইউএনও ইমতিয়াজ হোসেনের সই জাল করে পাটারিরহাটের মো. হান্নানকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এ ধরনের প্রায় ৭০০ জনকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ৫ কোটি টাকা উদ্যোক্তা ঋণ বিতরণ করা হয়। এর প্রায় ৮০ ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ খেলাপি।এছাড়া ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা উদ্যোক্তা ঋণ বিতরণ করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখানে ৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থে নির্দেশনা অমান্য করে পকেটভারি করেছেন বলেও জানান তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ শাখা থেকে ১৬ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা গ্রাহকরা ঋণ নিয়েছেন। এতে ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ঋণ খেলাপি রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ-সাত বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ খেলাপি ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ১ বছরের ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ৬ মার্চ অডিটে ৪৫ লাখ টাকার গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়ে ব্যাংকে জমা না দেওয়ার সত্যতা মেলে। পরে অডিট টিমের নির্দেশে ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেন মাঠকর্মীরা।

উপজেলা পরিষদে তোরাবগঞ্জ ও হাজীরহাটের পাঁচজন ইউপি সদস্যের (মেম্বার) সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, প্রকৃত গ্রাহকরা ঋণ পান না। তাদের হয়রানি হতে হয়। মাঠের কর্মকর্তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ করে টাকা উত্তোলন করে নিজেরা ব্যবসা করেন। পরে অফিসে বলেন, নদী ভাঙার কারণে ঋণ নেওয়া লোকজন ভোলা-বরিশাল চলে গেছে। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে।

গ্রাহক নিজাম উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘চরলরেন্সের মাঠ সহকারী মাইন উদ্দিন আমার ১৯ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা দেননি। পরে অডিট টিম ও ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কাছে বিচার দিলে তিনি ওই টাকা জমা দেন। কৌশলে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন তিনি।’

এ বিষয়ে জানতে মাইন উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ইশতিয়াক হোসেন বলেন, কাউকে ভয়ভীতি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনা সত্য নয়। জালিয়াতির সঙ্গে আমি জড়িত নই। প্রতিনিয়ত খেলাপি টাকা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।

ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ সোলায়মান বলেন, মাঠ সহকর্মীরা নতুন-নতুন নাম দিয়ে সামান্য কিছু টাকা সঞ্চয় করে জমা দেয়। গ্রাহকদের সশরীরে উপস্থিত করতে বলা হলেও তা পারছে না। এজন্য তারা আমাকে বদলি করানোসহ বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ব্যাংকের অনিয়ম ও মাঠ সহকারীদের জালিয়াতির অভিযোগটি পেয়েছি। এরমধ্যে আমার সই-সিলও জাল করার অভিযোগ আছে। তা তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, চিঠিটি এখনো আমি হাতে পাইনি। চিঠি পেলে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।


Side banner
Link copied!