
আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা দেখে গভীর আক্ষেপ প্রকাশ করছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তার ঘনিষ্ঠজন ও শ্যালক ডা. আনম নওশাদ খান এক সাক্ষাৎকারে জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রায়ই গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের করা ভুল নিয়ে কথা বলেন। এছাড়া দলটির আজকের পরিণতি সেই ভুলগুলোরই ফল বলেই মনে করেন আবদুল হামিদ।
আওয়ামী লীগের সামনে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ থাকলেও সেটি নির্ভর করবে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার ওপর—এমন মত প্রকাশ করেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
২০১২ সালে জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্বে থাকাকালে তিনি বলেছিলেন, ‘সরকার যদি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, জনগণ বেশিদিন তা সায় দেবে না।’ আজকের বাস্তবতায় সেই কথাই যেন মিলে গেছে।
বর্তমানে রাজনীতি থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন আবদুল হামিদ। শারীরিকভাবেও বেশ দুর্বল তিনি।সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সংবাদমাধ্যমটিকে এসব তথ্য জানান তার শ্যালক নওশাদ খান। তিনি জানান, থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে আবদুল হামিদ গত ৯ জুন রাতে দেশে ফিরেছেন।
নওশাদ খান বলেন, ‘তিনি এখন সম্পূর্ণ পারিবারিক পরিবেশে রয়েছেন। রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।শরীরের অবস্থাও সে রকম না।’
৫ আগস্টের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আর কোনো যোগাযোগ হয়নি বলেও জানান নওশাদ খান। এমনকি আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতার সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই।
নওশাদ জানান, আবদুল হামিদ নিয়মিত পত্রিকা পড়েন এবং সময় পেলে টেলিভিশনেও খবর দেখেন। দেশ ও রাজনীতির খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন সবসময়।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে দলটির অনেক নীতিগত বিষয় নিয়েও কথা বলতেন তিনি। শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার মতবিরোধ হতো বলে জানান নওশাদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিরোধের বিষয়ে নওশাদ বলেন, তিনি নিজেই বলেন, আমি অনেক কথা বলতাম, তাই অনেকে আমাকে পছন্দ করত না।
বর্তমানে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত আবদুল হামিদ। নওশাদ জানান, তার ক্যানসার এখন ‘স্টেজ থ্রি ও ফোর স্টেজের’-এর মাঝামাঝি। নিজে চলাফেরা করতে পারেন না, সবসময় সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। এমনকি নামাজও পড়তে পারেন না।
অনেকেই তাকে বিদেশে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও আবদুল হামিদ তাতে রাজি হননি। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে তিনি বলেন, আমি দেশে ফিরবই। যা হওয়ার হবে, মাটি-মানুষের মধ্যে থেকেই শেষ দিনটা কাটাতে চাই।
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা আবদুল হামিদ সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন টানা ১০ বছর ৪১ দিন।
তবুও হাওড়ের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার আত্মিক টান আজও অটুট। অসুস্থ শরীর নিয়ে সেখানকার মানুষের খোঁজখবর নেন নিয়মিত। নওশাদ জানান, হাওড়ে যাওয়ার ইচ্ছা এখনও তার মধ্যে প্রবল, কিন্তু শারীরিকভাবে সেটা আর সম্ভব নয়।
সূত্র: যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :