• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শায়েস্থাগঞ্জে সংকীর্ণ কার্যালয় থেকে সেবায় পিছিয়ে পরছেন দমকল কর্মীরা


FavIcon
মোঃ রহমত আলী, হবিগঞ্জঃ
প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম
শায়েস্থাগঞ্জে সংকীর্ণ কার্যালয় থেকে সেবায় পিছিয়ে পরছেন দমকল কর্মীরা
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস শায়েস্তাগঞ্জ

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় সংকীর্ণ কার্যালয় থেকে সেবায় পিছিয়ে পরছেন দমকল কর্মীরা। 
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুপাশে  উপজেলায় গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্প কারখানা ও আবসিক এলাকা। সেই সাথে বাড়ছে নানা দুর্ঘটনা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে আগুনের ঝুঁকি। আগুনের ঝুঁকি কমাতে ২০১২ সালে উপজেলায় স্থাপন করা হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন।

এরপর থেকেই রাত-দিন সমান করে কাজ করছেন অগ্নি নির্বাপক কর্মীরা।
 জেলার আশেপাশের উপজেলায় আগুন নিবানোর কাজে আত্মনিয়োগ করেন স্টশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 


হবিগঞ্জ সদর, বাহুবল উপজেলা, চুনারুঘাট উপজেলা, মাধবপুর উপজেলার মানুষের কাছে আস্তার নাম হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি।

নাগরিক সেবা আর নিজেদের কর্মদক্ষতায় প্রতিষ্ঠানটি তৃতীয় শ্রেণি থেকে উন্নীত হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। এজন্য সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখনই স্টেশনটি বর্ধিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তাঁরা বলছেন, শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সি গ্রেড থেকে বি গ্রেড এ উন্নীত হওয়ার কারণে জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। পাশাপাশি শায়েস্তাগঞ্জ শিল্পনগরী হওয়ার কারণে এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া সিলেট-ঢাকা মহাসড়র চারলেনে উন্নীত করা হলে স্টেশনের অনেক জায়গাই মহাসড়কে চলে যাবে। সেজন্য দ্রুত স্টেশনের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লীষ্টরা। পাশাপাশি জনবল ও অবকাঠামো বৃদ্ধিও করার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস শায়েস্তাগঞ্জ থেকে জানা যায়, বর্তমানে ২৪ জন অপারেশন স্টাফ, একজন ঝাড়ু–দার, একজন বাবুর্চিসহ মোট ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৮ জুন পর্যন্ত অগ্নিকান্ডে ২৮ জন মানুষ আহত হয়েছেন আর মারা গেছেন ৪ জন।

এছাড়া একই সময় পর্যন্ত শায়েস্তাগঞ্জে ২৪ টি অগ্নিকান্ড ও ২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ ৬০ হাজার তিনশত টাকা। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকৃত মালামাল প্রায় ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস শায়েস্তাগঞ্জের কর্মকর্তারা বলছেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের চুনারুঘাট, মাধবপুর ও হবিগঞ্জের সদর উপজেলার কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে কিংবা আগুন লাগার খবর স্টেশনে দেয়া মাত্রই তিনটি ইউনিট আগুন নেভানোর জন্য দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্ঠা করেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর আগুন নেভানো পাশাপাশি চলে উদ্ধার কাজ। সেজন্য ব্যবহার করা হয় টিটি গাড়ি। এই গাড়ি মালামাল ও যন্ত্রপাতি উদ্ধারের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া আহতদের জন্য থাকে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। ঘটনাস্থলে কেউ যদি আহত হলে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য এটি কাজে লাগছে।

শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের স্টেশন অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি মানুষের সেবা দিতে। ক্ষেত্রবিশেষে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা সব সময় শতভাগ হয়তো দিতে পারি না, তবে চেষ্টা করে যাই। আমরা মনে করি ইহা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে আমরা যে অফিসটিতে আছি সেখানে লোকবল আরও প্রয়োজন। তবে লোকবল থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে আমাদেরকে অনেক সময়ই মানবেতরভাবেই জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এছাড়া আমাদের যে জায়গাটি আছে এটি যথেষ্ট পরিমাণে নয়। স্টেশনের জন্য আরও জায়গা যদি বৃদ্ধি করা যায় তাহলে আরও বেশি সেবা দিয়ে যেতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, লাইনের গ্যাসের ব্যবস্থা না থাকার কারণে আমাদেরকে রান্নাবান্নার কাজে অনেক সময় নষ্ট করতে হয়। সেক্ষেত্রে সরকারি গ্যাসের ব্যবস্থা করা গেলে উপকার হয়।

আর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন হবিগঞ্জ জেলার ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর শিমুল মোহাম্মদ জানান, এটি সি গ্রেড থেকে বি গ্রেড এ উন্নীত হওয়ার কারণে আমাদের জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। এছাড়া এটি শিল্পনগরী হওয়ার কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। ফলে জনবল এবং অবকাঠামো বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে হওয়ার কারণে হয়তো মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করা হলে, আমাদের অনেক জায়গা মহাসড়কে ঢুকে যাবে। সে কারণে এখনই আমাদের জায়গা অধিগ্রহণ করা জরুরি এবং অবকাঠামো বর্ধিত করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এটিকে এ গ্রেডে উন্নীত করতে হলে এখনই জায়গা ক্রয় করা দরকার বলে আমি মনে করি।

তিনি আরও জানান, হবিগঞ্জ সদর, বাহুবল উপজেলা, চুনারুঘাট উপজেলা, মাধবপুর উপজেলা শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা এই পাঁচটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসটি হওয়ার কারণে খুব সহজে নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন সাধারণ জনগণ। যেকোনো দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২০ জুলাই শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই বিরামচর কলাপাড়ার জগন্নাথপুর মৌজায় শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। আর ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্টেশনের উদ্বোধন করেন।


 


Side banner
Link copied!