• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঠিকভাবে ভ্যাট দেয় না দেশের বেশিরভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্ট


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২১, ০৮:০২ পিএম
সঠিকভাবে ভ্যাট দেয় না দেশের বেশিরভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্ট
সঠিকভাবে ভ্যাট দেয় না দেশের বেশিরভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্ট

দেশে বিপুলসংখ্যক হোটেল-রেস্টুরেন্ট থাকলেও তা থেকে প্রত্যাশিত ভ্যাট আদায় হচ্ছে না। বেশিরভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্টই সঠিকভাবে ভ্যাট দিচ্ছে না। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সর্বোচ্চ ভ্যাট হারের পরেও এ খাতে প্রত্যাশিত ভ্যাট আদায় হয় না। দেশে বেষ্টনী ও বৈদ্যুতিক পাখা নেই, শুধু দুটি বাতি আছে এমন রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর কোনো ভ্যাট নেই। ফুটপাথের রেস্তোরাঁয় সাধারণত বেষ্টনী ও পাখা থাকে না। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় কিন্তু বেষ্টনী ও বৈদ্যুতিক পাখা আছে তেমন রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভ্যাট দিতে হয় ১৫ শতাংশ। ফাস্টফুডের দোকানের ক্ষেত্রেও একই শর্ত। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন ফাস্টফুডের দোকানে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। শ্রেণীভেদে কফিশপেও একই হারে ভ্যাট দিতে হয়। একইভাবে আবাসিক হোটেলে নন এসি কক্ষ থাকলে সাড়ে ৭ শতাংশ আর শীতাতপ রুমের ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এদেশে হোটেল-রেস্তোরাঁর ওপর সর্বোচ্চ ভ্যাট থাকার পরেও ওই খাতে প্রত্যাশিত ভ্যাট আদায় হয় না। হোটেল-রেস্তোরাঁ খাত জড়িত এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন (ভ্যাট) হার সর্বোচ্চ। মহামারী করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ অনেক দিন থেকেই বন্ধ ছিল। যে কারণে ওই খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে ভ্যাট হার ৫০-৬০ শতাংশ কমিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশেও ওই ভ্যাট হার ৩-৫ শতাংশ কমালে ভ্যাট আদায় বাড়বে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাত থেকে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৮৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৮ গুণ বেশি। চলতি বছরের ২৭ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের ৬ হাজার ৭৩৪টি হোটেল-রেস্টুরেন্টের ওপর বিবিএস জরিপ করে। এক দশক আগে দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৪টি। আর তাতে ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪ জনের কর্মসংস্থান ছিল। বর্তমানে ওই খাতে উল্লেখযোগ্যভাবে কর্মসংস্থানও বেড়েছে। ওই খাতে ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩২ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৮ লাখ ৩৭ হাজার আর বাকি সংখ্যা নারী।
সূত্র জানায়, করোনাকালে নির্দিষ্ট একটি সময়ে বিভিন্ন দেশে ভ্যাট হার কমানো হয়েছে। বিশ্বের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় রেস্টুরেন্টে ভ্যাট হার ২০ শতাংশ। করোনার কারণে ওই হার ১০ শতাংশ করা হয়। বেলজিয়ামে ৬ শতাংশ, ভারতে নন-এসি রেস্তোরাঁয় ভ্যাট হার ছিল ১২ শতাংশ ও এসি রেস্তোরাঁর ছিল ১৮ শতাংশ। তবে কয়েকটি রাজ্যে তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাছাড়া ভিয়েতনামে ৫ শতাংশ, ভেনেজুয়েলায় ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৭ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, গবেষণা অনুযায়ী দেশে ৪ লাখ ৩৬ হাজার হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে। প্রতিষ্ঠান আর জনবলের দিক থেকে পোশাক খাতের পরই হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতের অবস্থান। এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। ওই খাতে ভ্যাট হার ৩-৫ শতাংশ করা হলে বছরে অতিরিক্ত ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ভ্যাট হার অনেক বেশি। করোনার কথা বিবেচনা করে ভ্যাট হার কমানো হলে ওই খাত অন্তত ঘুরে দাঁড়াবে। আর ভ্যাট হার কমে গেলে খাবারের দামও কমে যাবে।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোঃ ফিরোজ আলম সুমন জানান, ৫ তারকা হোটেল ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেয় কিন্তু তারা ৮ শতাংশ রেয়াত নিতে পারে। আর সাধারণ হোটেল-রেস্তোরাঁ ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিলেও কোনো রেয়াত নিতে পারে না। ফলে সাধারণ হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট অনেক বেশি। পাশাপাশি ইএফডি মেশিনের কারণেও হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শতকরা মাত্র ৫ শতাংশ রেস্টুরেন্টে ইএফডি বসানো হয়েছে। ফলে যে রেস্টুরেন্টে মেশিন বসানো হয়েছে সেখানে ক্রেতা কম। সেক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড জরুরি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে এনবিআরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, এদেশে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভ্যাট হার একটু বেশি। তবে বেশিরভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্টই সঠিকভাবে ভ্যাট দেয় না। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ক্রেতা থেকে ভ্যাট নিলেও তা ফাঁকি দেয়। যদি সঠিকভাবে ভ্যাট দিতো তাহলে ভ্যাট হার কমানোর চিন্তা করা হতো। এমনকি ইএফডি বসানোর পরও ফাঁকি রোধ হচ্ছে না। তারপরও এনবিআর ওই খাত থেকে ভ্যাট আদায় করার চেষ্টা করছে। তবে সেক্ষেত্রে ভোক্তারাও সচেতন নয়।


Side banner
Link copied!