.কর্মচারীর একটি বড় অংশ কোটা জ্বালিয়াতির নিয়োগপ্রাপ্ত
.আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অস্থায়ী থেকে স্থায়ী করা ও দালালির সুযোগ দিয়ে বহিরাগত লোক দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো
.একপদে নিয়োগপ্রাপ্তকে দিয়ে আরেক দায়িত্ব পালন করানো
. সার্কেল অফিসগুলো থেকে ঘুষের টাকায় গ্যাটিজদের বেতন দেয়া
এডি এডমিন (সহকারী পরিচালক-প্রশাসন) ও তার সিন্ডিকেট বরাবরের অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা যেন বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোডস্ এন্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি)’র সদর কার্যালয়ে শিকড় গেড়ে বসেছে। আর এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ ধীরে ধীরে জটিলতার দিকে গড়ালে ও মিলছে না এর প্রতিকার। সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ও তার আস্থাভাজন তৎকালীন উচ্চমান সহকারী রেজাউর রহমান শাহিনের সাজানো সেই অনিয়মের অভয়ারন্যে বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার রক্ষাকবজের কৌশলী ভুমিকায় পাঠ করছেন বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ও তৎকালীন উচ্চমান সহকারী রেজাউর রহমান শাহিন যোগসাজসে ওই কার্যালয়ে অনেকটা ওপেনসিকরেট স্টাইলে স্থায়ী ও অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ,দায়িত্ব ও সুবিধা বন্টনে বৈসম্যেসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ স্বার্থ হাসিলে করে আসছিলেন। ওই সময় থেকেই ওই শাহিন সিন্ডিকেট আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অস্থায়ী থেকে (বহিরাগত/ দৈনিক মজুরী ভিত্তিক) কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ ও চাকরির আশ্বাসে অস্থায়ী লোক দিয়ে দায়িত্ব পালন করানোসহ এ ধরনের অনিয়ম গুলোকে আস্কারা দিয়ে আসছিলেন। এখনো সেই চলছে একই কায়দায় । বহাল তবিয়্যতে রয়েছে কোটা জ্বালিয়াতি করে নিয়োগপ্রাপ্ত একাধিক কর্মচারী,চলছে একপদে নিয়োগপ্রাপ্তকে দিয়ে আরেক দায়িত্ব পালন করানো। বরাবরের ওই সব অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়ে দাড়িয়েছে সদর কার্যালয়ে। আর সেই সাথে ওই সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ও উচ্চমান সহকারী রেজাউর রহমান শাহিন নিয়মবর্হিভুতভাবে বহিরাগতদের (গ্যাটিজ/দালাল হিসাবে পরিচিত) চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পদস্থ কর্মকর্তাদের গাড়ী চালানোসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করানোটা একটা মামুলি বিষয়ে পরিণত করেছিলেন। এখন তা আরো বেপরোয়ভাবে বলবদ রয়েছে। আর এসব বিষয় নিয়ে সদর কার্যালয়ে বরাবরের অসন্তোষ প্রায় বছর খানেকের বেশী সময় ধরে হঠাৎ বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। আর বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার হস্তক্ষেপের উদ্যোগ নিলেও সুফল মেলেনি। এর কারন তিনিও ওই এডি এডমিন সিন্ডিকেটের মুরিদ হয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, বর্তমান চেয়ারম্যান রীতিমত এডি এডমিন সিন্ডিকেটর রক্ষাকবজের ভুমিকায় থেকেও কৌশলে এ যাবৎ সম্পূর্ন ধরা ছোয়ার বাইরে থেকেছেন। আর তা সম্প্রতি নানা ঘটনাক্রমে স্পষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তবে সাবেক চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন তৎকালীন উচ্চমান সহকারী রেজাউর রহমান শাহিন ওই সময়েই ঝোকমত পদোন্নতিও বাগিয়ে নিয়ে আটঘাট বেধে নিয়েছিলেন। আর এতে এডি এডমিন (সহকারী পরিচালক,প্রশাসন)’র দায়িত্ব পাওয়ায় ওই সব অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা নির্বিঘ্নে বেগবান হয়ে উঠেছে। আর এসব নিয়ে নানা সমালোচনা এড়াতে বর্তমান চেয়ারম্যানের নেয়া সব পদক্ষেপই মাঝ পথে গতি হারিয়ে থেমে যায়। এর কারণ এ সবই লোক দেখানো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান,সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ও তৎকালীন উচ্চমান সহাকারী রেজাউর রহমান শাহিন (বর্তমান-সহকারী পরিচালক প্রশাসন) সদর কার্যালয়ের স্থায়ী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে সুবিধার বিনিময়ে কোটা জ্বালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ,একপদে নিয়োগ প্রাপ্তদের দিয়ে আরেক দায়িত্ব পালন করানো ও চাকরির আশ্বাস দিয়ে অস্থায়ীসহ বহিরাগত লোকজন দিয়ে দায়িত্ব পালন করিয়ে অবৈধ ফায়দা লুটে আসছিলেন। শুধু তাই নয়,অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত যারা তাদের মন রক্ষা করতে পেরেছিল, তাদের নানা কারচুপির মাধ্যমে চাকরি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের দাবি পূরণে ব্যার্থ সেলিম,মোস্তফা ও দিন ইসলামসহ আরো অনেকে চাকরির বয়স পার হওয়ার পরও আশায় ঝুলে আছেন। আর এ নিয়ে কথা তুললে তাদের তাড়িয়ে হুমকি দিয়ে দমিয়ে রাখা হচ্ছে। অথচ এদের পরের অনেকেই ওই সিন্ডিকেট ম্যানেজ করে ঠিকই রাজস্বের আওতায় আসছে। ওই তিনজন বরাবরই নিয়োগ আসলেই আবেদনসহ দৌড়ঝাপ করেও দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি পায়নি। আর এতে তারা গেল বছর সর্বশেষ আউট সোর্সিং-এর অর্ন্তভুক্ত হওয়ার চেস্টা করেন। এতে তারা পান কর্মবিচ্যুতির শাস্তি। এরপর প্রায় এক বছর পর সম্প্রতি তাদের কাউকে কাউকে মুচলেকা নিয়ে কর্মে বহাল করা হয়েছে। তাছাড়া পিয়নকে দিয়ে গাড়ীচালকের দায়িত্ব পালন ও প্রহরীকে দিয়ে পরিস্কার পরিচ্চন্নতার কাজ করানো নিয়ে অসন্তোষ অনেক দিন আগেরই। এসব বিষয় নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান এডি এডমিন (সহকারী পরিচালক প্রশাসন) রেজাউর রহমান ওই সময় উচ্চমান সহকারী হিসাবে দায়িত্বরত থাকলেও তৎকালিন চেয়ারম্যানের বলে তিনিই সদর কার্যালয়ের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তখন কোটা জালিয়াতির ধারাবাহিকতায় অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে তাহের নামের জনৈক গাড়ীচালকের বাড়ী নোয়াখালি হলেও তাকে কুষ্টিয়ার কোটায় চাকরি দেয়া হয়। একইভাবে ফোরকান নামের আরেক জনের বাড়ী বরিশাল অথচ তার একই পদে চাকরি হয়েছে মাদারীপুরের কোটায়। আর এডি এডমিনের গাড়ীচালক কবিরকে এতিম কোটায় চাকরি দেয়া হয়। আদৌ তিনি এতিম ছিলেন না। আর ইফনুস নামের খোদ চেয়ারম্যানের গাড়ীচালক ও সদর কার্যালয়ের অন্যতম হোতা হলেও তিনি স্বাক্ষরজ্ঞানহীন। আর এর কারণমোটা উপঢৌকনের বদৌলতে চাকরি পেয়েছেন। সদর কার্যালয়ের কর্মচারী সংক্রান্তে বরাবরের এসব নানা অনিয়ম বহাল থেকে তা যেন গতানুগতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যার নেপথ্যে এখনো বেপরোয়াভাবে সক্রিয় এডি এডমিন শাহিন। সেই সাথে সার্কেল অফিসগুলোতে বেড়েছে তার অবাঞ্চিত প্রভাব। যা নিয়ে সমালোচনার কমতি না থাকলেও ওই সিন্ডিকেটর কেউ তো নয়ই,এমন কি চেয়ারম্যান পর্যন্ত আমলে নিতে নারাজ।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের কাছে জানার জন্য মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে,তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে যান। আবার কখনো কখনো ফোন রিসিভই করেন না ।
আপনার মতামত লিখুন :