• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২

শরীয়তপুর-১ আসনে সাঈদ আসলামকে মেনে নিতে পারছে না তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটাররা


FavIcon
নুরুজ্জামান শেখ, শরীয়তপুরঃ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৫:২০ পিএম
শরীয়তপুর-১ আসনে সাঈদ আসলামকে মেনে নিতে পারছে না তৃণমূল  নেতাকর্মী ও ভোটাররা

শরীয়তপুর-০১ (পালং-জাজিরা) আসনকে ঘিরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তেজনার পারদ বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ভোটের মাঠে স্বাভাবিক কর্মতৎপরতার পাশাপাশি এখানে এবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে অন্তর্কোন্দল ও মনোনয়ন-সংকট। বিশেষ করে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলামকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে শুরু হয়েছে তীব্র মতবিরোধ, যা প্রতিদিনই নতুন নতুন রূপ নিচ্ছে, শরীয়তপুর-০১ আসনে তাকে মেনে নিতে পারছে না তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারা।

বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে শীর্ষ আসনগুলোতে তাদের প্রার্থীর নাম প্রকাশ করার পর থেকেই শরীয়তপুর-১ আসনে দেখা দেয় অস্থিরতা। ঘোষিত প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলাম শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও, স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ তাকে “অ-স্থানীয়” ও “গ্রহণযোগ্য নন” বলে দাবি করছেন এবং তিনি শরীয়তপুর-০৩ আসনের ডামুড্যা উপজেলার স্থায়ী বাসীন্দা। মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসির উদ্দিন(কালু)। তার সমর্থকরা বেশ কয়েকদিন ধরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, মশাল মিছিল এবং সড়ক অবরোধ করে মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।

বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন, দলীয়ভাবে যিনি বছরের পর বছর শ্রম দিয়েছেন, তাকে বাদ দিয়ে অন্য উপজেলা থেকে জেলা সদর আসনের প্রার্থী আনা হয়েছে। এটি তৃণমূলকে উপেক্ষা করার শামিল। বিএনপি যদি বিরুধ মিটাতে না পারে তাহলে সে সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

শরীয়তপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলী আজম সরদার বলেন, ‘শরীয়তপুর-০১ আসনে অন্য একটি নির্বাচনী এলাকা থেকে একজন নেতাকে এনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ত্যাগী নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা আমরা মানতে পারছি না। মনোনয়ন পরিবর্তন না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। শরীয়তপুর সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ছৈয়াল বলেন, সাঈদ আহমেদ জেলা পর্যায়ের নেতা হলেও তিনি শরীয়তপুর-০৩ নির্বাচনী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন,শরীয়তপুর ১ আসনে কোন যোগ্য পুরুষ নাই।এই থানার যোগ্য বেটারা কি মইরা গেছে।অন্য উপজেলা থেকে এসে এই উপজেলায় নির্বাচন করবে। যাকে আমরা চিনিনা জানিনা কোনদিন নামও শুনি নাই, তাকে ভোট দেওয়া লাগবো। আমরা ভোট দিব না।   

এছাড়ও বিক্ষোভকারীরা একাধিকবার শহরের বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন এবং কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সাধারণ ভোটাররাও পড়েছেন দিধাদন্দে।

জাজিরা উপজেলার এক তরুণ ভোটার নিরব সিকদার বলেন, আগে ভাবতাম বিএনপিই একমাত্র বিকল্প। কিন্তু এখন যদি তারা নিজেরাই এক থাকতে না পারে, তাহলে বিকল্প ভাবতেই হচ্ছে। যারা সুশাসনের কথা বলবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকবে তাদেরকেই এবার ভোট দিব। 

সদর উপজেলার তরুন ভোটার ও সাইদ আসলামের সমর্থক আনিছ সরদার বলেন, তারুন্যর অহংকার দেশ নায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে পছন্দ করে ধানের শীষ দিয়েছেন আমরা সবাই মিলে তাকেই ভোট দিব। সে হোক অন্য উপজেলার বাসিন্দা। 

শরীয়তপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তোয়াব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে তৃণমূলকে উপেক্ষা করলে তার প্রতিক্রিয়া ভাল হয়না। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি যদি দ্রুত নিরসন না হয়, তাহলে এর সরাসরি লাভবান হবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো।


Side banner
Link copied!