• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাভারে হৃদয় গ্রুপের ৮ সদস্য গ্রেপ্তার


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৪, ০৪:২২ পিএম
সাভারে হৃদয় গ্রুপের ৮ সদস্য গ্রেপ্তার

বহুল আলোচিত রাজধানীর সাভার এলাকায় আকাশ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি হৃদয় গ্রুপের প্রধান সন্ত্রাসী হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয়সহ গ্রুপের ৮ সদস্যকে সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে রোববার (২৪ মার্চ) দিবাগত রাতে ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। র‌্যাব বলছে, একটি ডিজে পার্টিতে মোবাইল হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই যুবক মারধরের শিকার হয়। এর জের ধরে সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভেতর ‘হৃদয় গ্রুপ’ ও ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপ’র সদস্যরা সংঘর্ষে জড়ালে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয় আকাশ। র‌্যাব বলছে, মোবাইল হারানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও আগে থেকেই তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই করা টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। আকাশ হত্যার আগে পূর্বশত্রুতার জেরে ছিনতাই করা টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গত ২২ মার্চ আমজাদ নামে আরেক যুবককে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে হৃদয় গ্রুপের সদস্যরা।
আজ (২৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনের হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা যায়। 
গত বছরের ৯ জুলাই মাদক ব্যবসার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ‘হৃদয় গ্রুপের’ সদস্যরা ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সদস্য আকাশ মাহমুদ নামক এক যুবককে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এছাড়া এই গ্রুপের সদস্যরা গত ১২ মার্চ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল নামক এক ব্যক্তিকে এবং গত ২১ মার্চ সোবহানবাগ এলাকায় আমজাদ নামক অপর এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। র‌্যাব এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হৃদয় গ্রুপের প্রধান মো. হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয় (২৪), অন্যতম সহযোগী আরিয়ান আহম্মেদ জয় ওরফে ড্যাগার আরিয়ান (২৩), নাসির উদ্দিন নাসু ওরফে বাবা নাসু (৫২), আবিরুল হক আবির ওরফে কাটা আবির (২৪), জোবায়ের হাসান খন্দকার ওরফে পাইটু জোবায়ের (১৯), জাকির হোসেন রনি (৩০), জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহেদ (৩৬) এবং আমির হামজাকে (২১) গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র, হেরোইন ও কষ্টিপাথর সাদৃশ্য মূর্তি। 
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে দাবি করে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা ঢাকা জেলার সাভার এলাকার ‘হৃদয় গ্রুপ’র সদস্য। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। তাদের গ্রুপে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। ৪-৫ বছর ধরে হৃদয়ের নেতৃত্বে ‘হৃদয় গ্রুপ’ পরিচালিত হয়ে আসছে। 
‘এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল সাভার এলাকায় নির্মাণ কাজে চাঁদাবাজি করা। প্রায়ই মাদক সেবন ও মাদক কেনা-বেচাসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো বলে জানা যায়। এই গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করত।’ 

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা আড়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ডিজি পার্টির আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে একটি মোবাইল হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র মোবাইল চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করে। ঘটনার জের ধরে সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভেতর ‘হৃদয় গ্রুপ’ ও ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সংঘর্ষে সময়ে আকাশকে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছিনতাই করা টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গত ২২ মার্চ ভিকটিম আমজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে সাভার এলাকার সবুজবাগ পুকুর পাড়ে ফেলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে গ্রেপ্তাররা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায় এবং আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাব গ্রেপ্তার করে।


Side banner
Link copied!