• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কাদের স্বার্থে উৎপাদন বন্ধ আইভি ফ্লুইড স্যালাইন!


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১, ০৯:১৬ পিএম
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কাদের স্বার্থে উৎপাদন বন্ধ আইভি ফ্লুইড স্যালাইন!

দেশের সরকারি সব হাসপাতালে আইভি ফ্লুইড স্যালাইন সরবরাহ করত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার  (ডব্লিউএইচও) নীতিমালা মেনে স্যালাইন তৈরি হচ্ছে না-এমন অজুহাতে কারখানার উৎপাদন স্থগিত করে দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর পেছনে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ইন্দন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বাজারে বেড়েছে স্যালাইনের দাম, বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে রোগীদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, দেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বাজেটের ৬১ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে ওষুধে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় আইভি ফ্লইডে। জানা গেছে, আইপিএইচে ৫০ বছর ধরে ২২ ধরনের স্যালাইন, ব্লাডব্যাগ, ট্রান্সফিউশন সেট উৎপাদন করা হচ্ছিল। এতে বছরে এক লাখের বেশি ব্লাডব্যাগ তৈরি হতো, যা দেশের মোট চাহিদার সাত ভাগের এক ভাগ। উৎপাদন করত বিভিন্ন ধরনের ১৪-১৭ লাখ স্যালাইন। এসব স্যালাইন কম দামে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হতো। দামের প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছিল না বেসরকারি ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।
অভিযোগ রয়েছে, উৎপাদনের মানসম্মত চর্চা (ডৎএমপি) নেই-এমন অজুহাতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২০১৯ সালের আগষ্টে আইপিএইচের উৎপাদন স্থডসু করে। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ও তৎকালীন সবিচ (অব.)  আসাদুল ইসলাম কারখানা পরিদর্শনের পর এটি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এতে কলকাঠি নেড়েছে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অথচ সরকার চাইলে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানার উৎপাদনের পরিবেশ আধুনিক করতে পার। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদাসীন। তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব বলেন, উৎপাদনব্যবস্থা স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় আমরা কারখনা আধুনিক করার সুপারিশ করেছিলাম। ইডিসি এলকে উৎপাদনে ব্যঠশআপ দেওয়ার কথা বলেছিলাম। পরে কী হয়েছে, সেটি আমার জানা নেই।
হাসপাতাল ও বাজার ঘুরে বর্তমানে বেসরকারি অ্যাকমি ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মা,পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, লিবরা ফার্মাসিউটিক্যালস, অপসো স্যালাইন ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আইভি ফ্লুইড স্যালাইন পাওয়া গেছে বেশি।
২০১৯ সালে বন্ধের আগে আইপিএইচের তৈরি ৫০০ সিসির এক প্যাকেট গ্লুকোজ স্যালাইন বিক্রি হতো ২৫ টাকা।  বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন যা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ সিসির নরমাল স্যালাইন আইুপিএইচ বিক্রি করত ২৫ টাকা এবং ১ হাজার সিসির ৪২ টাকা। একই স্যালাইন বেসরকারি প্রতি বিক্রি করতে যথাক্রমে ৬৫ ও ৮০ টাকায়, বর্তমানে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৩% সোডিয়াম ক্লোরাইড ৫০০ সিরি স্যালাইন আইপিএইচ বিক্রি করত ৪২  টাকা। দেশের কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এটি তৈরি করছে না। প্রতষ্ঠিান এটি তৈরি করছে না। অনেকে চোরাইপথে ও্ই স্যালাইন এনে ৩ হাজার টাকায় বিক্রিয় করছে।
সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীতে জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের স্যালাইন কারখানায় গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। ভেতরে প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব যন্ত্র দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলে অকেজো হয়ে পড়বে। ১২-১৫ কোটি টাকা ব্যয় করলেই কারখানটি আধুনিক রুপ নেবে।
আইপিএইচের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, বন্ধ নয়, এটিকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে হবে।
ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আইয়ুব হোসেন বলেন, তারা আইপিএইচের স্যালাইন খারখানা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছেন, উৎপাদনের পরিবেশ স্ববাস্থ্যসম্মত নয়। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও সংশোধন না হওয়ায় লাইসেন্স স্থগিতের সুপারিশ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্লান্টটি আধুনিক অবকাঠামোসহ তৈরি করলে উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া যেতে পপারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম সফিউজ্জামান বলেন, সরকার কী করবে  না-করবে, সেটি তাদের বিষয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ জন্য দায়ী নয়।


Side banner
Link copied!