
জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপ্রত্যাশিত ভাবে বেড়ে গেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন বৃষ্টি হচ্ছে না। যখন প্রয়োজন নেই তখন হচ্ছে।
অসময়ে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে কিছু মানুষ বিধ্বংশী আচরণ করছে। গাছপালা কেটে, নদনদী দখল -দূষণ করে, পাহাড় টিলা কাটার কারণে প্রকৃতি তাঁর স্বাভাবিক নিয়মে চলতে পারছেনা।
এহেন আচরণের কারণে ভাঙছে নদী, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ। এই অঞ্চলে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। পরিবেশগত এই বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণে জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
ঋণ নয়; বরং জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২৮ জুন শনিবার হবিগঞ্জে সাইকেল শোভাযাত্রা ও পথসভায় বক্তারা একথা বলেন।
বেলা ১১ টায় শহরের রাজনগর বাডস কেজি এন্ড হাই স্কুল প্রাঙ্গণে থেকে ঋণ বাতিল করে জলবায়ু অর্থায়নের দাবিতে সাইকেল শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে টাউন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুর পাড়ে শেষ হয়।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এই কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে প্লানেটিয়ার্স ক্লাব হবিগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সাইক্লিং কমিউনিটি এর অর্ধশতাধিক সাইক্লিস্ট অংশগ্রহণ করেন।
ধরা হবিগঞ্জের আহবায়ক তাহমিনা বেগম গিনি'র সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: ইকরামুল ওয়াদুদ। এসময় সংহতি জানিয়ে মুঠোফোনে বক্তব্য রাখেন ধরা কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল। মূল বক্তব্য রাখেন খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাট্যকর্মী ওসমান গনি রুমি, প্ল্যানেটিয়াস ক্লাব হবিগঞ্জের সমন্বয়কারী সজিব চন্দ্র গোপ প্রমুখ।
খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন পরিবেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পুরানো, নদ-নদী, বনাঞ্চল ধ্বংস, কলকারখানার দূষণসহ মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ এর কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, ভূমিধস, ঝড়, অতিবৃষ্টি, খরা বেড়ে গেছে। এতে করে পৃথিবীর বাস্তসংস্থান ও মানব সমাজের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। স্থানীয়ভাবে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলে সুতাংসহ হবিগঞ্জের নদ-নদী, জলাশয়, হাওর-বিল ভয়াবহ দূষণের শিকার হয়েছে। দখল-দূষণে খোয়াই ও পুরাতন খোয়াই আজ অস্তিত্ব সংকটে। যে শহরের কূলঘেষে খরস্রোতা খোয়াই নদী বয়ে গেছে সেটি বন্যা নিয়ন্ত্রনে সহায়ক হওয়ার কথা থাকলেও সেই খোয়াই আজ হবিগঞ্জের দু:খ। আজ হবিগঞ্জ পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার। যা ভবিষ্যতে মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিবে। অবিলম্বে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে হবিগঞ্জ জেলার পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশসমূহ দায়ী হলেও এর অভিঘাতে জর্জরিত বাংলাদেশের মতো দেশসমূহের প্রান- প্রকৃতি। বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অথচ উন্নত দেশসমূহ ক্ষতিপূরনের নামে ঋন প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতের বিপক্ষে দাড়াচ্ছে।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব ও ওয়াটারস কিপার্স এলায়েন্স এর বোর্ড মেম্বার শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় এখন শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়, বরং একটি নতুন এবং উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজন আর্থিক সম্পদ জোগাড় এবং ন্যায়সঙ্গত ও দায়িত্বশীলভাবে সকলকে একত্রিত করা। এখন আগের চেয়েও বেশি প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা, সংহতি এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ।
আপনার মতামত লিখুন :