• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

এম ভি মহরাজ লঞ্চ ডুবির ১৮ বছর আজও থামেনি স্বজনদের আহাজারি


FavIcon
সমির ভট্টাচার্য্য
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩, ০৯:১৯ পিএম
এম ভি মহরাজ লঞ্চ ডুবির ১৮ বছর আজও থামেনি স্বজনদের আহাজারি
ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে ২০০৫ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি। চাঁদপুরের মতলবের সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা এমভি মহারাজ লঞ্চডুবি 

আজ তার ১৮ বছর পূর্ণ হলেও আজও থামেনি নিহত স্বজনদের আহাজারি । 

 

এই দিনটিতে নিহতদের স্বজনরা তাদের স্মরণ করে শোক সভা মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে। অনেকে গন কবরের পাশে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের ধারণা এমভি মহারাজ লঞ্চে নিহত না পাওয়া স্বজনরা এখানেই আছেন চিরনিদ্রায়।

 

২০০৫ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় এম ভি মহারাজ কয়েক শতাধিক যাত্রী নিয়ে সদরঘাট ত্যাগ করে। রাত ১১ টার দিকে বুড়িগঙ্গা নদীতে পাগলা নামক স্থানে ঝড়ের কবলে লঞ্চটি উল্টে ডুবে যায়। যাত্রীদের বেশিরভােই ছিল মতলব উত্তর এবং দক্ষিণের। দূর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো মতলবে পড়ে যায় শোকের ছাঁয়া। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে মতলবের আকাশ-বাতাস। একের পর এক লাশগুলি ভেসে উঠে নদীতে। ট্রলারযোগে লাশগুলো মতলব থানায় এনে জমা করতে থাকে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এই লঞ্চডুবিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ১১২ জন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষের হিসাবমতে, নিহত হয়েছিল ৩ শতাধিক এর বেশি।

 

গত ২০০৬ সালে সরকারিভাবে নিহতদের পরিবারের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে মোট ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ১ মেট্রিকটন চাল প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে তাদের জন্য আর কোনো বরাদ্দ আসেনি। লঞ্চ দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের মধ্যে ছিল নারায়নপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, তার কন্যা মতলব কঁচি-কাঁচা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী শিলাত জাহান অর্থি, উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল হাই মাস্টার, আইসিডিডিআরবির ডাক্তার মো. মাসুম, দগরপুরের প্রকৌশলী ফারুক দেওয়ান, মতলব বাজারের সার ব্যবসায়ী ইয়াসিন মৃধা, ডেফোডিল ইউনির্ভাসিটির কর্মকর্তা ফরুক দেওয়ান ও তার পরিবার, দশপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলম, বাইশপুর গ্রামের ছোট খোকন ও বড় খোকন, মাসুদ, মতলব উত্তরের বারহাতিয়া গ্রামের ভাঙ্গারী ব্যবসায়া শাহ আলম, পাঠানচকের ইয়াছিন, নিশ্চিন্তপুরের টিপু শিকদার, উত্তর নিশ্চিন্তপুরের বাদলসহ নাম না জানা অনেকে।

 

উদ্ধারকৃত লাশগুলো তখন মতলব দক্ষিণ থানার সামনে সারিবদ্ধ ভাবে তাবু টানিয়ে রাখা হয়েছিল। অধিকাংশ লাশের মুখমণ্ডলের শরীর গলে যাওয়ায় তাদের চিনতে আত্মীয় স্বজনদের হিমশিম খেতে হয়েছিল। লাশের পরনে থাকা পোশাক এবং জন্মগত কোন চিহ্ন দেখে অনেক লাশ সনাক্ত করেছে স্বজনরা। আর যে সকল লাশের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি তাদের ছবি তুলে তাদের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে ঢাকিরগাঁও রিয়াজুল জান্নাত কবরস্থানে ও মতলব উত্তরের ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে দাফন করা হয়।

 

উল্লেখ্য, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত নৌ-পথে ১ যুগে ১২টি লঞ্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও ডাকাতিয়া নদীতে ১২ বছরে এমভি রাজহংস, এমভি সালাউদ্দিন, এমভি অমিত এক্সপ্রেস, এমভি নাসরিন, এমভি লাইটিং সান, এমভি দিগন্ত, এমভি মহারাজ, এমএল মজলিশপুর, এমএল শাহ্পরান, এমভি মদিনার আলো, এমভি শরীয়তপুর ও এমএল সারস লঞ্চ ডুবিতে ২ সহস্রাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া বাল্কহেডের সাথে সংঘর্ষে অল্পের জন্য বেঁচে যায় আল-বোরাক ও এমভি সোহাগ লঞ্চের ১১শ’ যাত্রী। মহারাজ লঞ্চ ডুবি থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া পৌলপাড়া গ্রামের মোঃ সফিকুল ইসলামের ছেলে স্বপন বলেন সেই রাতের কথা মনে পরলে এখনও শরীর শিউরে উঠে । আল্লাহর অশেষ রহমতে সেইদিন প্রানে রক্ষা পেয়েছি ।


Side banner
Link copied!