
মানবজীবনের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক রোগগুলোর একটি হলো হিংসা। এটি এমন এক নৈতিক ব্যাধি, যা একজন মানুষকে শুধু আত্মিক দিক থেকেই নয়, আখিরাতেও ক্ষতির মুখে ফেলে। হিংসা মানে হলো—আল্লাহ কোনো মানুষকে যে অনুগ্রহ বা নিয়ামত দান করেছেন, তা অন্যের সহ্য না হওয়া, এবং সেই নিয়ামতটিই যেন ধ্বংস হয়ে যায়, এমন কামনা করা।
হিংসুক ব্যক্তি চায়, যাকে সে হিংসা করে, তার সেই অর্জন, সম্মান বা সফলতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক। এই হিংসার আরেক রূপ হলো বিদ্বেষ। বিদ্বেষপূর্ণ ব্যক্তি সবসময় অন্যের অকল্যাণ কামনা করে, বিশেষ করে যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত।
পবিত্র কোরআনে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে আল্লাহ বলেন—
“তোমাদের যদি কল্যাণ স্পর্শ করে, তারা দুঃখিত হয়; আর যদি তোমাদের অকল্যাণ হয়, তারা খুশি হয়।”
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২০)
হিংসার পরিণতি কী?
হিংসা ও বিদ্বেষে কোনো কল্যাণ নেই। এটি ঈমানদার ব্যক্তির পরিচায়ক নয়। বরং ঈমানদার সবসময় চায় তার ভাইয়ের কল্যাণ, সুখ, শান্তি ও সফলতা। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন—
“তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, ষড়যন্ত্র করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও।”
(বুখারি)
তিনি আরও বলেন—
“তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্যও সেই জিনিস ভালোবাসবে, যা সে নিজের জন্য ভালোবাসে।”
(বুখারি)
ঈমান ও হিংসা একত্রে টিকতে পারে না
হিংসা একটি অন্তরের রোগ। যদি অন্তর বিদ্বেষে ভরে যায়, তাহলে কর্মও কলুষিত হয়ে পড়ে। একজন প্রকৃত মুসলিমের অন্তরে হিংসার স্থান নেই। মহানবী (সা.) বলেন—
“কোনো বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রে অবস্থান করতে পারে না।”
(নাসাঈ)
তাই হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকা, ক্ষমা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করাই একজন প্রকৃত মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে—
“নিশ্চয়ই মুমিনরা সবাই ভাই ভাই।”
(সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১০)
আল্লাহর শিক্ষা ও আমাদের দায়িত্ব
আল্লাহ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইতে:
“হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।”
(সুরা ফালাক, আয়াত : ৫)
প্রিয় রাসুল (সা.) বলেন—
“এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তাকে জুলুম করে না, লজ্জিত করে না, তুচ্ছ ভাবেও না। তাকওয়া এখানে”— তিনি তিনবার নিজের বুকে ইশারা করেন।
(মুসলিম)
আসুন, আমরা হিংসা নয়, ভালোবাসা দিয়ে এই পৃথিবীকে গড়ে তুলি। পরস্পরকে ক্ষমা করি, আপন করে নেই, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরের মঙ্গল কামনা করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত একটি হৃদয় দান করুন এবং মিলেমিশে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :