• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ঘুরতেন জিতু, পদ পেয়েই হয়ে ওঠেন বেপরোয়া


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ঘুরতেন জিতু, পদ পেয়েই হয়ে ওঠেন বেপরোয়া

স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় রিকশাচালক বাবাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার সন্ধ্যার আগে শহরের ফুলবাড়ী মধ্যপাড়া করতোয়া নদীর ঘাটসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিকশাচালকের নাম মো. শাকিল মিয়া (৩২)। তাঁর বাড়ি শহরের শিববাট্টি এলাকায়।এ ঘটনায় অভিযুক্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জিতু ইসলাম এবং তাঁর সহযোগী মতিউর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। আটক জিতু ইসলাম বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাধারণ সম্পাদক বলে সাংগঠনিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর আটক জিতু সম্পর্কে অনুসন্ধানে প্রকাশ্যে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চলাফেরা করতেন জিতু।তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে।জানা যায়, ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে জিতু ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়।সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হন।মোটা অঙ্কের চাঁদা চান। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে। চাঁদা না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলাও করেন জিতু। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জানা যায়, জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভাণ্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই একপর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী। 

এ হত্যার ঘটনা আলোড়ন ফেলে দেয়। জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রবিবার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে পুলিশ। 

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির বলেন, সকালের ওই ঘটনার জেরে বিকেলের দিকে জিতু ও তাঁর সহযোগীরা শাকিল মিয়াকে বাড়ি থেকে তুলে মারধরের পর ‘মব’ তৈরি করে পুলিশে সোপর্দ করার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।

এদিকে জিতুকে আটকের পর বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল গণমাধ্যমকে বলেন, জিতু ইসলামকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।


Side banner
Link copied!