• ঢাকা
  • শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

ফ্যাসিস্টের দোসর হায়দার এখনো বহাল তবিয়তে গণপূর্তে


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:৩২ পিএম
ফ্যাসিস্টের দোসর হায়দার এখনো বহাল তবিয়তে গণপূর্তে

গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) মোঃ হায়দার আলী—নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ সত্ত্বেও এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন। সহকর্মী প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা তার দাপটের কাছে তটস্থ ও ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অবৈধ অর্থের প্রভাবে দলবল নিয়ে রঙ্গিন পানির নেশায় মত্ত থাকা থেকে শুরু করে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত।


২০০৬ সালে গণপূর্তে চাকরিতে প্রবেশের পর মাত্র দুই দশকে হায়দার আলী গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। সাবেক বিএনপি নেতার সুপারিশে চাকরি পেলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিজেকে ‘সাচ্চা আ’লীগার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। দলীয় মিছিল-মিটিং, ১৫ আগস্টের কাঙ্গালী ভোজ আয়োজন, বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দেওয়া—সবকিছুই ছিল আওয়ামী শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণের কৌশল। এভাবেই তিনি বেনামী ঠিকাদারি ব্যবসাসহ নানা উপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।


খুলনা, বরগুনা, ভোলা ও বিভিন্ন জেলায় চাকরির সময়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে গভীর সখ্যতা গড়ে তোলেন হায়দার আলী। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে তিনি চুক্তিমূল্যের ৫৫% থেকে ৬৫% পর্যন্ত ঘুষ নিতেন। বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক শাখায় কর্মরত থাকার সুবাদে তিনি ঠিকাদারদের জন্য বহু অনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করেছেন মোটা অঙ্কের বিনিময়ে।

বর্তমানে তিনি খুলনা গণপূর্ত-১ কার্যালয়ে কর্মরত। এর আগে খুলনা নুরনগরের গণপূর্ত-২ কার্যালয়ে অবস্থানকালে ভাইয়ের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে অসংখ্য কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন।


২০ বছরের ক্যারিয়ারে বেতন বহির্ভূত অবৈধ আয়ে হায়দার আলী গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল জীবন।

খুলনা খালিশপুরে নেভি চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ করেছেন চোখ ধাঁধানো বাড়ি।

মহিলা পলিটেকনিক কলেজের সামনে আরেকটি বাড়ি।

পাইকগাছায় চিংড়ির ঘের।

খুলনা শহরের বিভিন্ন মার্কেটে দোকান।

নামে-বেনামে জমি ও ব্যবসা।

একজন সাধারণ উপসহকারী প্রকৌশলী হয়েও তিনি প্রাইভেট গাড়িতে চড়েন, যার রক্ষণাবেক্ষণ খরচই তার মাসিক বেতনের চেয়ে বেশি।


আওয়ামী নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে ভাইদেরকেও সরকারি চাকরি ও ঠিকাদারিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হায়দার আলী। ছোট ভাই অহিদকে দিয়ে করান স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ। অভিযোগ রয়েছে, অহিদ টেন্ডারবাজি, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।


দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধা নিলেও, গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে আ’লীগ সরকারের পতনের পর আবারও পাল্টে ফেলেছেন খোলস। মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির খুলনা অঞ্চলের সহ-সভাপতির পদ দখল করেছেন।


হায়দার আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের পাহাড়সম অভিযোগ থাকলেও এখনো তিনি সরকারি পদে বহাল আছেন। সচেতন মহলের প্রশ্ন—কীভাবে একজন উপসহকারী প্রকৌশলী এত অল্প সময়ে এত বিপুল সম্পদের মালিক হতে পারেন?


Side banner
Link copied!