
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ক্লাবের সভাপতি মোঃ মোশারফ হোসেন এবং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার মাহামুদ শৈবালের বিরুদ্ধে ক্লাবের নামে বরাদ্দকৃত ১ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে আরও দূর্ণীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তা পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হবে। আজ তারা ১লক্ষ ৪১ হাজার টাকা কিভাবে আত্মসাৎ করলেন তা তুলে ধরা হচ্ছে।
তার আগে টাকা আত্মসাৎকারীদের পরিচয় জানাটা খুবই জরুরী। টাকা আত্মসাৎকারী প্রথম ব্যাক্তি হচ্ছেন মোঃ মোশারফ হোসেন। তিনি জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের নেজারত শাখার একজন অফিস সহকারী। আর অপরজন হচ্ছেন শাহরিয়ার মাহামুদ শৈবাল। তিনি জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদারের একজন গোপনীয় সহকারী অর্থাৎ সিএ। তারা দুইজন এবং অদৃশ্য আর একজনকে নিয়ে এই ১লক্ষ ৪১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আর এই অদৃশ্য মানবটি হলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম।
জানা যায়, জাজিরা উপজেলায় অবস্থিত ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ক্লাবের সংস্কার এবং ক্লাবের আসবাব পত্র ক্রয় করার জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরে একনেক থেকে ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সেই বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে ক্লাবের আসবাব পত্র ক্রয় সহ ক্লাবের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়।
পূণরায় পরের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে একই ক্লাবের আসবাবপত্র কেনা এবং সংস্কারের দোহাই দিয়ে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত সাধারণ টিআর এর ১লক্ষ ৪১ হাজার টাকা ক্লাবের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়।
সরকারী বিধি মোতাবেক, সরকারী প্রকল্পের কোন টাকা কোন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ নিতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের যৌথ সাক্ষরকৃত আবেদন পত্র প্রয়োজন হয়। এখানে এই বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে সেই ধরনের কোন নিয়ম কানুন মানা হয়নি। এখানে সভাপতি মোশাররফ হোসেন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার মাহামুদ শৈবাল কমিটির অন্য কোন সদস্যকে না জানিয়ে শুধু মাত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নগ্ন সহযোগিতায় ১লক্ষ ৪১ হাজার টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা ২০২১-২২ অর্থ বছরে একনেকের টাকায় সংস্কারকৃত ক্লাব দেখিয়ে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে টিআর এর টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক দিন যাবৎ জাজিরা উপজেলা ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ক্লাবের বিভিন্ন পদে থাকা সদস্যদের মনে চাঁপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। চলছে বিভিন্ন ধরণের বাক-বিতন্ডা। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের কোন সহিংস ঘটনা।
এ ব্যাপারে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ তোতা মিয়া মাদবর এবং ওই ক্লাবের সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেনের সাথে আলাপ কালে তারা বলেন, ক্লাবের নামে ১লক্ষ ৪১ হাজার টাকার টিআর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্যের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়টি জানতে পেরেছি। প্রথমে আমরা বিষয়টি কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন এবং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার মাহমুদ শৈবালের নিকট জানতে চেয়েছিলাম। তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এর কিছুদিন পর ক্লাবের সকল সদস্যদের নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনায় বসলে তারা টিআর এর টাকার ব্যাপারে স্বীকার করেন এবং তারা ৮০ হাজার টাকা ফেরত দিতে চান। আমরা তখন বলেছি, সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে পুরো টাকা ফিরৎ দিতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোন টাকা ক্লাবের একাউন্টে জমা দেয়নি এবং ক্লাবের প্রয়োজনে কোন আসবাবপত্রও ক্রয় করেননি।
এ ব্যাপারে ক্লাবের সভাপতি মোশারফ হোসেনের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, টিআর এর বরাদ্দকৃত ১লক্ষ ৪১ হাজার টাকার মধ্য থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটি টিভি কেনা হয়েছে। আর বাকি টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে জমা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার মাহামুদ শৈবালের কাছে এ ব্যাপারে বক্তব্য চাইলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে জাজিরা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলামের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, জাজিরা উপজেলায় কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ক্লাবের নামে বরাদ্দকৃত টিআর এর সমস্ত টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার কাছে কোন টাকা জমা রাখা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনও স্যারের নির্দেশক্রমেই এই ক্লাবের নামে টিআর বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সরকারী বিধি মোতাবেক কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হওয়ার পর বাকী টাকা পরিশোধ করার বিধান থাকলেও কোন কাজ না করে পুরো টাকা কীভাবে দিলেন এই পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা তো সবই জানেন, কেন বিব্রতকর প্রশ্ন করেন?
আপনার মতামত লিখুন :