
সুনামগঞ্জের ছাতকে সাবেক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে ফাঁসানোর এক ন্যক্কারজনক ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বাগবাড়ী এলাকার প্রভাবশালী ১২ জন চিহ্নিত ব্যক্তিসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও, শুরু থেকেই থানা পুলিশের রহস্যজনক গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী মহল। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে যেকোনো মুহূর্তে দু'টি গ্রামের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, যা বর্তমানে উপজেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর রাতে ছাতক পশ্চিম বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পৌরসভাস্থিত বাগবাড়ী গ্রামের কানাখালি রোডের সাত্তার টাওয়ারের সামনে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্তের আক্রমণের শিকার হন পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান ভুক্তভোগী মো. হাসান আহমদ (২৫)। অভিযুক্তরা দেশীয় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁর পথরোধ করে এবং কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়েই তাঁকে নির্মমভাবে মারধর শুরু করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে জোরপূর্বক অপহরণ করে সাত্তার টাওয়ারের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে হাসান আহমদকে বলতে বাধ্য করা হয় যে, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মাদক ব্যবসায়ী, তার সেল্টারে (আশ্রয়ে) তুই (হাসান) কাজ করিস। জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে নিরুপায় হাসান আহমদকে অভিযুক্তদের শিখিয়ে দেওয়া এই মিথ্যা ও বানোয়াট জবানবন্দির ভিডিও ধারণে বাধ্য করা হয়।
আরও জানাযায় , হাসান আহমদের গ্রামের সম্পর্কের ভাই সাবেক ছাত্রনেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সঙ্গে অভিযুক্তদের দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিদ্বেষ বিদ্যমান। এই শত্রুতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই জুবায়েরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদী হয়রানি করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতেই নিরীহ হাসান আহমদকে ব্যবহার করে সাজানো সাক্ষ্য তৈরির এই জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে জুবায়ের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে অভিযুক্তরা তাঁকেও মাদক ব্যবসায়ী বলে অপবাদ দিতে থাকে। তাৎক্ষণিক উপস্থিত সকলকে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে যাওয়ার প্রস্তাব দেন জুবায়ের। সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আগমনের আশঙ্কায় অভিযুক্তরা পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় পরিবর্তন ঘটিয়ে তড়িঘড়ি করে মীমাংসার কথা বলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি আলা উদ্দিনকে ডেকে আনেন। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি আলা উদ্দিন ও খালেদ মিয়ার মধ্যস্থতায় এবং হস্তক্ষেপে হাসান আহমদ অভিযুক্তদের কবল থেকে মুক্তি পান।
তবে, অভিযোগ উঠেছে, ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামলাটি গ্রহণ করতে কেবল গড়িমসিই করেননি, বরং এজাহারে উল্লেখিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইনি ধারাও বাদ দিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে অভিযুক্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিয়মিতভাবে জীবননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান মামলা রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে এবং দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :