মালয়েশিয়ার ক্যামেরন হাইল্যান্ডসের বাণিজ্যিক ভবন ও কৃষিক্ষেত্রে ‘বিদেশি কলোনি’র আধিপত্য ঠেকাতে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে। এই মেগা-অপারেশনে মোট ১ হাজার ৮৮৬ জন বিদেশি নাগরিকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বিভিন্ন অভিবাসন লঙ্ঘনের দায়ে মোট ৪৬৮ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটকদের বিরুদ্ধে বৈধ পরিচয়পত্র না থাকা, ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান এবং জাল পারমিট ব্যবহারের মতো গুরুতর ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আটকদের মধ্যে মিয়ানমারের নাগরিকরাই সংখ্যায় সর্বাধিক ১৭৫ জন। এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশের ১৭৪ জন, ইন্দোনেশিয়ার ৬৭ জন, নেপালের ২০ জন এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। আটক হওয়াদের বেশিরভাগই শ্রমিক ও কৃষক হিসেবে এই অঞ্চলে বসবাস ও কাজ করছিলেন।
ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক জাকারিয়া শাবান জানান, আটকদের মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি জাল পারমিট ব্যবহার করেছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এর পেছনের মূল হোতা কারা এবং তারা কোন এজেন্টের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন সে বিষয়ে আমরা আরও তদন্ত করব।’
আটক কয়েকজন বিদেশি নাগরিক অভিযোগ করেছেন, নিজ নিজ দেশের এজেন্টরা মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য তাদের কাছ থেকে ১২ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত ফি নিয়েছে।
মহাপরিচালক জাকারিয়া আরও বলেন, পাহাড়ি এলাকা এবং রাজধানী থেকে দূরে থাকার কারণে অনেক বিদেশি নাগরিক মনে করতেন কর্তৃপক্ষ সহজে তাদের নাগাল পাবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘আমাদের দেশে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের অনুপ্রবেশে সহায়তার কোনো প্রচেষ্টায় আমরা আপস করব না।’
অভিযানের সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই বহু বিদেশি নাগরিক মরিয়া হয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। অনেকে বাথরুমের ভেতরে দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়েন, কেউ গাড়িতে শুয়ে ঘুমানোর ভান করেন এবং কয়েকজন দোকানপাটের ছাদের ওপর উঠেও পালাতে চেয়েছিলেন।
আটক হওয়া ৩৩ বছর বয়সি বাংলাদেশি সুজন সর্দারকে বাথরুমের ভেতরে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি স্বীকার করেন যে, তার ভিসার মেয়াদ গত মাসেই শেষ হয়েছে এবং তিনি প্রতিদিন ৭৫ রিঙ্গিত বেতনে খামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২১ বছর বয়সি আরেক বাংলাদেশি মাহসুম জানান, তিনি দুই বছর ধরে খামারে কাজ করছেন এবং তার পরিবার খুব কষ্টে আছে।
অভিযান চলাকালীন পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হওয়া বেশ কয়েকজন বিদেশিকে ইমিগ্রেশন বিভাগের প্যারামেডিক দল প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক আরও জানান, আটকদের বৈধতা যাচাইয়ের পর যাদের বৈধ পারমিট রয়েছে তাদের পরবর্তীতে মুক্তি দেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :