
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় দায়িত্ব গ্রহণের কিছু দিনের মধ্যেই পুনরায় দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায় এসেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত। এর আগেও রাজশাহীর পবা উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে ৯১ লাখ টাকার আশ্রয়ণ প্রকল্প নিজের চাচাতো ভাইকে পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় তিনি দেশব্যাপী সমালোচিত হন। এবার উল্লাপাড়ায় এসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পে ঘুষ, আত্মীয়প্রীতি, বিধিবহির্ভূত প্রকল্প গ্রহণ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। "উন্নয়ন নয়, চলছে স্বজনপ্রীতির উৎসব। দুর্নীতির বিচার না হয়ে বরং তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে উন্নত উপজেলায় বদলি দিয়ে। এমন মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা। এডিপির রাজস্ব উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে নেওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে একাধিক প্রকল্প ‘উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৪’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮’-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে গ্রহণ করা হয়েছে। এতে উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
জানা যায়, এডিপির আওতায় নেওয়া ১১৮টি এবং পিআইসি পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত ৫৪টি প্রকল্পের বড় একটি অংশই নামমাত্র কাজ দেখিয়ে অর্থ লুটপাটের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। পিআইসি গঠন ছাড়াই কাজ শুরু, ভুয়া শ্রমিক তালিকা, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, যাচাই ছাড়াই বিল অনুমোদন, পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ ভাগিয়ে দেওয়াসহ একাধিক অনিয়ম অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন ক্লাবে ৪ লাখ টাকার ফুটবল বিতরণ, নারী ক্লাবে ২ লাখ টাকার ক্রীড়া সামগ্রী, একই নামের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ লাখ টাকা করে বেঞ্চ সরবরাহ প্রকল্প গ্রহণ, ওয়েব পোর্টাল ও প্রশাসনিক প্রশিক্ষণের নামে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ, উপজেলা পরিষদ চত্বরকেন্দ্রিক ১৪ লাখ টাকার কাজ এবং গ্যারেজ থাকা সত্ত্বেও ১০ লাখ টাকার গ্যারেজ সংস্কার কাজের বিল উত্তোলন নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া কৃষি অফিস ও এএসপি সার্কেল অফিস মেরামতের জন্য ১২ লাখ ৭০হাজার টাকার বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, যা সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পিআইসি সদস্যদের কেউ কেউ জানান, অনুমোদিত প্রি-ওয়ার্ক ও মেজারমেন্ট শীটের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো মিল নেই, বরং কাগজে-কলমেই সব কাজ সম্পন্ন দেখানো হয়েছে। এমনকি তথ্য অধিকার আইনে সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের তথ্য চাইলে প্রকৃত তথ্য না দিয়ে অস্পষ্ট কাগজ ধরিয়ে আবেদনকারীর স্বাক্ষর রেখে বিদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ আরও বেড়েছে।
এব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এরপর তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে দ্রুত ফোনের লাইন কেটে দেন।
এব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কল রিসিভ করেন নি তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :