মানবতাকে সামনে রেখে এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই ছিল মরহুম ইউসুফ আলী আকন্দের মুল উদ্দেশ্য।
বিশিষ্ট সমাজসেবক দানশীল মরহুম ইউসুফ আলী আকন্দের মৃত্যুর তিন মাস পার হলেও শোকের মাতম থামেনি পরিবার ও এলাকাবাসির মাঝে।
কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নসহ কান্দাপাড়ায় হাজার হাজার অসহায় নারী পুরুষের জীবিকা নির্বাহের পথ প্রদর্শক ও শিল্প উদ্যেক্তা মরহুম আলহাজ মো. ইউসুফ আলী ।
সিরাজগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট বিড়ি ব্যবসায়ী সমাজসেবক মেসার্স সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব মো. ইউসুফ আলী আকন্দ গত সোমবার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন । (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মানুষ চলার পথে অনেক ভালো কাজের মাধ্যমে তার কর্মগুণে নিজ অর্থায়নে অনেক ভাল কাজের নিদর্শন রেখে গেছেন।
জানা যায়, এক সময় কান্দাপাড়া গ্রামের মানুষ দারিদ্যের সীমার নিচে বসবাস করতেন । সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরী ও কিসমত বিড়ি ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠিত হবার পর ওই এলাকার নারী পুরুষ বিড়ি তৈরী করে আলোর পথ দেখতে শুরু করেন । কান্দাপাড়া তথা কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নের বিড়ি ফ্যাক্টরি ও নিজ নিজ বাড়িতে বিড়ি তৈরী করে স্বাবলম্বি হয়েছে।
আলহাজ্ব মো. ইউসুফ আলী আকন্দ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামে ১৯৬৩ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম হাজী আফসার আলী ছিলেন বিনয়ী সৎ নম্র ভদ্র স্বভাবের ব্যক্তি ছিলেন এবং একজন সমাজসেবক ও উদ্যোক্তা। মাতা হাজীবী আমাতুন নেসা একজন সফল গৃহিণী ছিলেন।
বিনয়ী ভদ্র ও ঠান্ডা মেজাজের মানুষ মরহুম আলহাড় মো. ইউসুফ আলী আকন্দ এলাকায় বিড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠান করে এলাকায় হাজারো দুস্থ অসহায় নারী পুরুষকে জীবিকার পথ নিশ্চিত করে তার শিল্প কারখানায় কাজ করে অনেকে স্বাবলম্বি ও আলোর পথ দেখিয়েছেন।
তার সাপ্তাহিক রুটিং ছিল প্রতি শুক্রবারে আগত ভিখারীদের নিজ হাতে দান করা। মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় দুস্থ অসহায় মানুষকে নগদ টাকা শাড়ি লুঙ্গি ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন ।
সেই চিন্তা থেকে শিল্প উদ্যোক্তা সাদা মনের মানুষ সমাজসেবক মরহুম হাজী আফসার আলী ১৯৬০ সালের দিকে এক সময়ের নিভৃত এলাকা সিরাজগঞ্জের কান্দাপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন মেসার্স সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরি। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েয়ে হাজারো মানুষের। যার মধ্যে ৭০ ভাগ নারী। সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কারণে কান্দাপাড়া এলাকার ও সিরাজগঞ্জের সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কান্দাপাড়ায় সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কারণে শুধুই কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়নি সরকারও প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে। তাই সরকারকে কর দিয়ে রাজস্ব দিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামগ্রিকভাবে অবদান রেখেছেন সামাদ সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরির স্বত্ত্বাধিকারী মরহুম ইউসুফ আলী আকন্দ। মরহুম ইউসুফ আলী আকন্দের ত্যাগ, সততা, নিষ্ঠা এবং প্রবল আত্মবিশ্বাসে এক সময়ে স্বল্প পরিসরে গড়ে তোলা সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরি এখন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। যেখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া গরিব, নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ।
নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকটা ভরসার ও জীবন জীবিকা নির্বাহ করার প্রতিষ্ঠান এখন মেসার্স সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরি।
মরহুম হাজী আফসার আলী নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ষাটের দশকে স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠা করেন মেসার্স সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরি। সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরি তথা এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী মরহুম ইউসুফ আলী আকন্দ এখন শুধু সিরাজগঞ্জেই নয় সারা দেশের ব্যবসায়ী বিশেষ করে টোবাকো ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি স্বনামধন্য নাম এবং সামাদ বিড়ি ফ্যাক্টরি জেলার স্বনামধন্য ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান।
মরহম হাজী আফসার আলীর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ভার বড় সন্তান মরহুম ইউসুফ আলী আকন্দ তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আঁকরে রেখেছেন। ধীরে ধীরে আরও সম্প্রসারণ করছেন। আলহাজ্ব ইউসুফ আলী আকন্দ শুধুই একজন ব্যবসায়ী ছিলেন না। সামাজিক উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করে দান, অনুদান, সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সমাজের নানা উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখেছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন থেকে কান্দাপাড়া হাটে যাওয়ার সময় আনসার ভিডিপি কার্যালয়ের পশ্চিম কান্দাপাড়া কবরস্থানে একটি বহুতল ভবন নির্মান করেন নিজ অর্থায়নে।
নিজ বাড়ির সামনে বায়তুল মোয়াজ্জেম জামে মসজিদ নামে যে দৃষ্টিনন্দন আকর্শনীয় গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ দেখা যায় সেই মসজিদটি নিজ খরচে প্রতিষ্ঠা করেছেন ।
আপনার মতামত লিখুন :