বাংলাদেশ চা খাত এখন বহুমুখী সংকটে। বর্তমানে ব্যাংকের ঋণ জটিলতার কারণে নগদ অর্থ না পাওয়ায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি টি কোম্পানির চারটি চা বাগানে ১৪ মাস ধরে বেতন - ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ব্যহত হচ্ছে ।
ফলে দেখা দিয়েছে বাগান শ্রমিক থেকে কর্মকর্তা - কর্মচারীরা অসন্তোষ । এছাড়া অর্থনৈতিক দৈন্যদশা ও প্রশাসনিক জটিলতার মধ্যে পরেছে নোয়াপাড়া , লাল চান্দ , দেউন্দি , মিরথিংগা চা বাগান ।
২০২৪ সালে ২৭ জানুয়ারি ভোর সকালে লাল চান্দ চা বাগান বিদ্যুৎতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে কারখানা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও গুদামে মালামাল পুড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে চা বাগানটি বন্ধ রয়েছে অর্থ অভাবে ।
অন্য বাগান চালু থাকলেও অর্থ অভাবে উৎপাদন নড়বড়ে রয়েছে । খুব চাপের মুখে চা বাগানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এমডি), ব্যবস্থাপক - কর্মচারী ও শ্রমিকরা। চলছে এসব চা বাগান স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে ।
গত রবিবার দুপুরে দেউন্দি টি কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ( এমডি) ওয়াহিদুল হক সভাপতিত্বে ও চার বাগানের অর্ধশতাধিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বৈঠকে এক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
বৈঠকে জানানো হয় , ১৯৯৭ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক হতে দেউন্দি টি কোম্পানির অধীনে চারটি চা বাগানে নিয়মিত ঋণ সহায়তা দিয়ে আসছে । তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া আশ্বাস দিলেও বাস্তবে ঋণ দেওয়া বন্ধ রয়েছে । ফলে নোয়াপাড়া , লাল চান্দ , দেউন্দি, মিরথিংগা চা বাগান গুলো পরিচালনায় সংকট দেখা দিয়েছে এবং চা বাগান গুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এ অবস্থায় ১৪ মাস ধরে চারটি চা বাগানের এমডি , ব্যবস্থাপক, স্টাফ , শ্রমিকদের কোনো বেতন - ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ -সুবিধা পাচ্ছে না । চারটি চা বাগানের নেতৃবৃন্দরা জানান , শ্রমিকদের ৫ দফা দাবি দেউন্দি টি কোম্পানির মালিক বিএনপি সরকার আমলে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুর্শেদ খানের কাছে উপস্থাপন করা হলে ও এখনো এমডি , ব্যবস্থাপক, স্টাফ ও শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করা হয় নি ।
চা বাগান গুলোর ভবিষ্যৎ শ্রমিক, কর্মকর্তা - কর্মচারীদের জীবিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শ্রমিক নেতারা৷ দ্রুত সমাধানের আহবান জানান । শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা বলেন , ব্যাংকে উর্ধতন কর্মকর্তা কেন ঋণ দিবে না প্রথমে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারক লিপি দিয়ে চারটি চা বাগানের শ্রমিকরা ঢাকায় উর্ধতন কর্মকর্তা সাথে কথা বলবো নতুবা বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা সাথে দেখা করবো।
ঋণ না দিলে চা বাগান বন্ধ করে দেবো । জানাযায় , কৃষি ও শিল্প উভয় মাধ্যমে চা উৎপাদন হলেও দেশের চা বাগান গুলো রয়েছে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে । শ্রমঘন খাত টির উদ্যোক্তরা শিল্পের মতো ঋণ সুবিধা পেলে ও সামপ্রতিক বছর গুলো উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের বড় পার্থক্য লোকসানে রয়েছে চা বাগান।।
চা খাতের উৎপাদন পদ্ধতির একটি অংশ কৃষি ধাঁচের হওয়ায় শিল্প প্রকৃতঋণ পদ্ধতির কারণে তীব্র তারল্য সংকটে রয়েছে বাগান মালিকরা। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে প্রায় শতভাগ দেশীয় চাহিদা মেটাতে চা খাতের এ সংকট নিরসনে ঋণ পদ্ধতি সহজী করণ ছাড়া ও কৃষি ঋণ সুবিধার দাবি তুলেছেন বাগান মালিকরা ।
বাগান সূত্রে জানা যায় , দেশে প্রতি বছর চা বিক্রি হওয়া শুল্ক - কর ব্যতিত চায়ের মূল্য বেশি। সরাসরি পরোক্ষভাবে শ্রমিক চা খাতে কর্মরত। দেশের চা বাগান ও ক্ষুদ্র আকারে উদ্যোগক্তারা চা উৎপাদন করেন। তবে সবচেয়ে ভালো উন্নত মানের চা দেউন্দি টি কোম্পানি। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে টানা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে নিলামে চা বিক্রি করতে হচ্ছে চা বাগান ।
এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার পর ও কৃষি ব্যাংক থেকে দেউন্দি টি কোম্পানিকে ঋণ না দেওয়ায় চারটি চা বাগানে তারল্য সংকটে শ্রমিকদের মজুরি , পিএফ সহ অন্যান্য সুযোগ- সুবিধা বকেয়া রাখতে বাধ্য হয়েছে ।
এর পাশাপাশি বাগান কর্মকর্তা - কর্মচারীরা বেতন - ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না ১৪ মাস ধরে । আর্থিক সংকটে কর্মকর্তা - কর্মচারী ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ তহবিলে চাঁদা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না । চা সংসদের সদস্যরা জানান , প্রতিটি চা বাগানে চা খাতে কৃষি ব্যাংক থেকে ৬৫- ৭০ শতাংশ ঋণ শতাংশ ঋণ দিয়ে থাকে। অথচ অপরাপর শিল্প ও উদ্যোক্তারা ঋণ প্রধানে করা কড়ি আরো পের নিয়মটি চায়ের মতো নিরাপদ খাতে ও আরোপ হওয়ার সংকটে পড়েছে দেউন্দি টি কোম্পানির চা বাগান ।
এখন পর্যন্ত ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি । ২০২৪ সালে চা বাগান লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে কম চা উৎপাদন করেছে । চায়ের মতো কৃষি নির্ভর খাতে নেয়া ঋণে মাত্রা অতিরিক্ত সুধে ঋণ পেতে কৃষি ব্যাংক নানা বিড়ম্বনা উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে । সংকট নিরসনে বর্তমান সরকার উদ্যোগী না হলে চা বাগানের শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়বে ।আর চা উৎপাদন কমলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চা আমদানি করতে হবে বলে আশঙ্কা করেন । এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত দেউন্দি টি কোম্পানির চারটি চা বাগানের প্রতি পদক্ষেপ না নিলে চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।
আপনার মতামত লিখুন :