বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি-এর মহাব্যবস্থাপক (আইসিটি বিভাগ) প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গাজীপুরের কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈর এলাকার রানীগঞ্জ পর্যন্ত নামে–বেনামে গড়ে তোলা বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমানের পিতার নাম একুব আলী। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার সনমানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণগাঁও এলাকায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, চাকরিতে যোগদানের আগে তার পরিবারে উল্লেখযোগ্য কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না। পৈতৃক ভিটেমাটিতে বর্তমানে তার বড় ভাই বসবাস করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৪–৯৫ সালে তিনি তিতাস গ্যাসে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও সাভার অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দায়িত্ব পালনকালে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে—শত শত শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং কয়েক হাজার আবাসিক ভবনে বেআইনিভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে সরকারকে হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে—রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট
গাজীপুর সিটি এলাকায় স্ত্রী ও সন্তানের নামে একাধিক প্লট
কাপাসিয়া থানার নিকট রানীগঞ্জ এলাকায় শত বিঘার বেশি জমি, যেখানে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান তার দুই সন্তানকে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন এবং সেখানেই তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া স্ত্রীর ব্যবহারের জন্য রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়দের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রে কোটি কোটি টাকা জমা থাকার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে প্রাপ্ত বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধার সঙ্গে এসব সম্পদের আকাশচুম্বী ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্ট মহল। অনুসন্ধানকারীদের মতে, এসব সম্পদের বৈধ উৎস নির্ধারণে জরুরি ভিত্তিতে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে জানতে তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক সিদ্দিকুর রহমানের মুঠো ফোনে একাধিক ফোন করেও তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
সচেতন মহলের দাবি, তিতাস গ্যাসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল পদে থাকা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগগুলো দুদককে নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য জাতির সামনে আনা হোক।
আপনার মতামত লিখুন :