• ঢাকা
  • সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

কয়রা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম
কয়রা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

কয়রা উপজেলার বিভিন্ন জনবান্ধব প্রকল্পে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব—এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ে সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ, ভূয়া তালিকা তৈরি, চেকের টাকা ভাগাভাগি, ফেক আইডি ব্যবহারসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি।

মনিরুজ্জামান ২০২৩ সালের জুনে কয়রা উপজেলায় যোগদান করেন। তবে তার চাকরিজীবন শুরু হয় ২০০০ সালে ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীন দারিদ্র মহিলাদের উন্নয়ন প্রকল্পে’। এর পর তিনি দীর্ঘ সময় পাইকগাছা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। উপরমহলের আশীর্বাদে তিন দফায় প্রায় দশ বছর পাইকগাছায় দায়িত্ব পালনকালে একযোগে কয়রার অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকার সরকারি বরাদ্দের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তার দায়িত্বকালে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি, ডি ডব্লিউ বি, জিসিএ প্রকল্প, কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিবছর কয়রায় ৬-৭ কোটি এবং পাইকগাছায় ৫-৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকত। সুবিধাভোগীদের মধ্যে এসব বরাদ্দ বণ্টনের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে একাধিক ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পাইকগাছার আইজিএ প্রকল্পের একজন প্রশিক্ষক জানান, কর্মকর্তার নির্দেশে সরাসরি চেক তোলা হতো। ভাতাভোগীর পরিবর্তে সাজানো নারীকে দিয়ে টাকা উঠানো হত। এভাবে প্রশিক্ষণার্থী ভাতার অর্ধেক টাকা মনিরুজ্জামান নিজে নিয়ে নিতেন, বাকিটা ভাগ করে দেওয়া হতো। এমনকি প্রশিক্ষণার্থীদের অনুপস্থিত দেখানোর নির্দেশও আসত তার কাছ থেকে।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থীর তালিকায় ভূয়া নাম সংযুক্ত করে জনপ্রতি ১২,০০০ টাকা ভাতা বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তালিকায় নাম থাকলেও অনেকেই জানতেন না যে তাদের নামে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

একজন ভুক্তভোগী গৃহবধূ জানান, কয়েক বছর আগে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে জানানো হয়, তিনি এ ভাতা পাবেন না। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারেন, তার নামে মোট ২৫,২০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত, যখন পাইকগাছায় দায়িত্বে ছিলেন মনিরুজ্জামান।

কৃষি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মনিরুজ্জামানের সময় অনেক ভাতাভোগীর এনআইডি ব্যবহার করে অন্য ব্যক্তিকে নিয়ে এসে একাউন্ট খোলা হতো। সন্দেহ প্রকাশ করলে তারা অন্য ব্যাংকে লেনদেন শুরু করেন।

বর্তমানে পাইকগাছা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তার স্বীকার করেছেন, পূর্ববর্তী সময়ে কিছু প্রশিক্ষণার্থী তাদের ভাতা উত্তোলন করেননি, তাদের চেক এখনও ব্যাংকে জমা রয়েছে। তবে তিনি সরাসরি আগের কর্মকর্তার অনিয়ম নিয়ে মন্তব্য করেননি।
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান এর মুঠোফোনে অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা যা খুশি তাই লিখেদেন। 

সরকারের জনবান্ধব প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের এ অভিযোগে কয়রা ও পাইকগাছার সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। স্থানীয়রা মনে করছেন, সঠিক তদন্ত হলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র উন্মোচিত হবে।
 


Side banner

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর

Link copied!