জনসাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এস্টিমেটর আনোয়ার হোসেন সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়—ঘুষ, ঠিকাদারি বাণিজ্য, অনিয়ম, আর প্রকাশ্য ক্ষমতার অপব্যবহার। একই পদে বছরের পর বছর বহাল থেকে তিনি স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স বানিয়ে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি চাকরিতে থেকে নিজের পরিবারের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়া সরাসরি কর্মচারী আচরণবিধি (১৯৭৯) এর ২৭(বি) ধারা লঙ্ঘন, যা ‘অসদাচরণ’ হিসেবে শাস্তিযোগ্য। কিন্তু এসব বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন অবাধ ‘টেন্ডার ব্যবসা’।
টাঙ্গাইল জেলার সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা আনোয়ার দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকায় বসবাস করছেন। প্রথম জীবনে ভাড়া বাসায় থাকলেও এখন তিনি থাকেন নিজের কেনা ফ্ল্যাটে—আল-হুদা অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি ৪০, রোড ১, শেখেরটেক, আদাবর।
কয়েক বছর আগেও যিনি সিএনজি বা রিকশায় চলাফেরা করতেন, এখন তিনি চলাচল করেন লাল রঙের প্রাইভেট কারে।
আনোয়ারের স্ত্রীকে মালিক দেখিয়ে তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের নাম—“মেসার্স ওহী ট্রেডার্স”। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি প্রকল্পের মূল্যধারণা ও অনুমোদনের ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি—
নিজেরই দেওয়া এস্টিমেট- নিজেরই তদারকি,নিজের পরিবারের প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার নিশ্চিত,আর কাজ না করেই বিল উত্তোলন। এই পুরো প্রক্রিয়া চক্রের মতো দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছেন।
স্থানীয় ঠিকাদাররা অভিযোগ করে জানান—“আনোয়ার ছাড়া পিআইইডির কোনো কাজ অগ্রসর হয় না। তার কমিশন, তার অনুমতি ছাড়া কোনো টেন্ডার পাস হয় না। তিনি প্রকাশ্যে চাকরি আর ঠিকাদারি—দুটোই একসাথে চালাচ্ছেন।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও জানান—“এস্টিমেটর আনোয়ার ঘুষ বাণিজ্য আর নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ বাগিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন। এতে প্রকৃত ঠিকাদাররা বঞ্চিত হচ্ছে, সরকারি কাজ ব্যাহত হচ্ছে।”
ভুক্তভোগীেদের দাবি, সরকারি বেতনভাতা দিয়ে এত সম্পদ অর্জন অসম্ভব। সামান্য এস্টিমেটর হয়ে নিজের নামে-বেআইনি সম্পদ আর স্ত্রীর নামে কোটি টাকার টেন্ডার—বিষয়টি স্পষ্টভাবে দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংয়ের ইঙ্গিত দেয়।
এস্টিমেটর আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য দেননি।
জনসাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে এ ধরনের দুর্নীতির নাটাই খুলতে এবং সম্পদের উৎস যাচাইয়ের জন্য দুদকের দ্রুত, স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত জরুরি প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন :