• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

মনোহরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত ২২


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম
মনোহরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত ২২

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের আশিরপাড় বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। এ সময় বাজারের কমপক্ষে ১৩টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে হামলাকারীরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে হামলার ভয় এখনো তাদের কটেনি।বাজারের অনেকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

 

আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের অনেকগুলো দোকানপাট বন্ধ। বন্ধ এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন, ঘটনার পর থেকে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা না হলে যেকোনো সময় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।ফলে অনেকে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মৈশাতুয়া ইউনিয়নের আশিরপাড় বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে। আহতদের মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৪ জনকে কুমিল্লা ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মৈশাতুয়া ইউনিয়নের আশিরপাড় বাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের খানাতুয়া এবং আশিরপাড় গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ চলছিল। কয়েক মাস আগে আশিরপাড় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খেলাধুলা নিয়ে খানাতুয়া গ্রামের কয়েকজন কিশোরের সঙ্গে আশিরপাড় গ্রামের কয়েকজন কিশোরের কথা কাটাকাটি ও বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে খানাতুয়া গ্রামের কিশোররা আশিরপাড় গ্রামের দুজনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। পরে মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ এ ঘটনা মীমাংসার জন্য উভয় গ্রামের সর্দার-মাতব্বরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশিরপাড় গ্রাম ও বাজারের একাধিক ব্যক্তি জানান, এমন অনভিপ্রেত ঘটনার যেনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আশিরপাড়সহ আশপাশের গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পদক্ষেপ নেন। কিন্তু খানাতুয়া গ্রামের লোকজন এতে সাড়া দেননি। ওই ঘটনার জের ধরে গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে খানাতুয়ার গ্রামের কয়েকজন কিশোর ও যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে উভয় গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

আহতরা হলেন- আশিরপাড় বাজারের ফল দোকানদার আরাফাত (২২), রাকিব (২৮), পারভেজ (৩২), মোরশেদ আলম মানিক (৩৮), আবু ছায়েদ (৪৫), লাকসাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশিরপাড় গ্রামের মো. শাহ আলমের ছেলে আরাফাত (২৫), একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩৩), সিয়াম (১৪), খানাতুয়া গ্রামের সামছুল হক (৫০), আবুল কালাম (৪৫), ফয়সাল হোসেন (২১), নজির আহমেদ (৩০), আবদুস সাত্তার, সিদ্দিকুর রহমানসহ আরো ৬ জন।

দুই গ্রামের সংঘর্ষের ঘটনায় বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে আলোচনাক্রমে এ ঘটনার স্থায়ী মীমাংসা হওয়া দরকার। তা না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

আশিরপাড় বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী মো. হুমায়ুন জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে আশিরপাড় গ্রামের ৩/৪ জন ছেলে আমার ফার্মেসির পাশের ফল দোকানদার আরাফাতের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। এ সময় ৬/৭ যুবক ও কিশোর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আকস্মিকভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ফল ব্যবসায়ী আরাফাতসহ ৩ জনকে কুপিয়ে আহত করে। ওই স্থানীয় দুজন লোক তাদের থামাতে চাইলে হামলাকারীরা তাদেরকেও কুপিয়ে আহত করে।

তিনি জানান, হামলাকারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখে প্রাণভয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা দ্রুত দোকান-পাট বন্ধ করে ফেলেন। বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাসহ পথচারীরা প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক্‌ ছুটাছুটি শুরু করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

আশিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদ আলম মানিক বলেন, ‘কেনাকাটা করতে বাজারে আসি। হঠাৎ দেখি ফল ব্যবসায়ী আরাফাতকে পাশের খানাতুয়া গ্রামের শামিম, ফয়সাল, হৃদয়, শাহাবুদ্দিন, মহিনসহ কয়েকজনে মিলে মারধর করছে। এমতাবস্থায় আমিসহ আরো দুজন এগিয়ে গিয়ে কি হয়েছে জানতে চাই এবং গণ্ডগোল করতে তাদের বারণ করি। এ সময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকেসহ আমার ছেলে সিয়াম, ভাতিজা আরাফাত এবং আবু ছায়েদকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ ছাড়াও তাদের হামলায় আমাদের গ্রামের ১০/১২জন আহত হন। তারা বাজারের ১২/১৩টি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।’

খানাতুয়া গ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ জানান, আশিরপাড় বাজারে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর বাড়ি খানাতুয়া গ্রামে। আশিরপাড় গ্রামের লোকজন বেশ কিছু দিন বাজারটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার পাঁয়তারা করছে। বাজারের আশপাশের সরকারি জায়গা দখলে চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব বিষয়ে নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।তিনি জানান, ওইসব ঘটনার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে আশিরপাড় গ্রামের কয়েকজন যুবক আমাদের গ্রামের লোকজনকে বাজারে পেয়ে কুপিয়ে আহত করে। এতে প্রায় ১০ জন আহত হন। তন্মধ্যে ২ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়াও আমাদের গ্রামের ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ১৩টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। হামলাকারীরা দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে।গতকাল বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি বিপুল চন্দ্র দে মুঠোফোনে বলেন, ‘আশিরপাড় বাজারে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে পূর্বের ঘটনার জের ধরে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


Side banner
Link copied!