
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার গবাদি পশুর হাটগুলো শেষমুহূর্তে জমে উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখরিত উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাট। এ বছর ভারতীয় গরু তেমন একটা না আসায় কৃষক ও খামারিরা এবারে কিছুটা লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা দেখছেন। বিভিন্ন হাটে বড় গরুর চেয়ে মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।বড় সাইজের গরুগুলো বাইরে থেকে আসা বড় ব্যবসায়ীরা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পশুর হাটগুলো সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীও টহলে রয়েছে।
এ বছরও কোরবানির পশুর দাম বেশি বলে জানান ক্রেতারা। আর খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের যে দাম তাতে লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৩টি স্থায়ী হাটের পাশাপাশি ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এবারে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ২৯টি কোরবানির গবাদি পশুর হাট বসবে। এ ছাড়াও ১টি পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নে ষাঁড় ৯২২৮টি, গাভী ১২৪টি, বলদ ২টি, ছাগল ২২৪৫টি ও ভেড়া ২৮৫টিসহ মোট ১১৮৮৪টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।এ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১১হাজার ২০টি।প্রস্তুত রয়েছে ১১ হাজার ৮৮৪টি। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ৮৬৪টি পশু উদ্ধৃত রয়েছে যা অন্যান্য উপজেলার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
উপজেলার পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নে এ বছর ১২টি নিবন্ধিত খামার ছাড়াও উপজেলাতে আরো শতাধিক অনিবন্ধিত খামার। সৌখিন কৃষক ও গৃহস্থদের মৌসুমী পোষা পশু রয়েছে যা উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। খামার ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে পোষা ১/২টি পশু করে উপজেলার প্রায় সব গ্রামেই রয়েছে।বড় ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে গো খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালনে ব্যয় বেড়েছে। তাই গরু গুলির দাম বেশ বেশি হাঁকতে হচ্ছে।
আজ বুধবার (৪ জুন) সকালে চিরাং ইউনিয়নে স্থায়ী চিরাং পশুর হাটে গরু কিনতে আব্দুস সাত্তার জানান, বড় গরুর চেয়ে মাঝারি আকারের গরুর দাম বেশি। হাটে এসেছি গরু কিনতে। কিন্তু এখনো পছন্দমতো গরু পাইনি। আজকে না পেলে অন্যদিন আরেক পশুর হাটে যাব।
অন্য আরেক ক্রেতা আপেল বলেন, ‘গরু কিনেছি, তবে গত বছরের চেয়ে দাম অনেকটা বেশি।’
চিরাং বাজার হাটের গরু বিক্রেতারা জানান, এবার গরুর দাম কিছুটা কম। এক লাখ টাকার গরু ৮০/৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম অনেকটাই বেশি। নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে অন্তত ৮-১০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে।
মোজাফরপুর ইউনিয়নের গগডা গ্রামের আবুল কাশেম আকন্দ বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরে গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে অনেকটাই। এর ওপর যদি ভারত থেকে আসা গরু কোরবানির হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি হয়, তবে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।’
চিরাং হাটের গরুর পাইকার রহিম উদ্দিন জানান, গত কয়েকদিনের বিরুপ আবহাওয়া প্রতিকূলের থাকায় গরু কেনা-বেচা কম হয়েছিল। তবে গতকাল থেকে আবহাওয়া অনুকুলের দরুন কোরবানির পশুর বিক্রির অনেকটা বেশি।
চিরাং বাজার ইজারাদার বাট্টা গ্রামের আহম্মদ আলী খান জানান, গরু হাটের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার যাতে কোনো সমস্যা না হয়,সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২৯টি পশু হাট রয়েছে। উপজেলার চাহিদার আলোকে কোনো পশুর সংকট হবে না। হাটগুলোতে গরুর সুস্থতা যাচাইয়ের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
কেন্দুয়া থানার ওসি মো মিজানুর রহমান বলেন, ‘আশা করি কোরবানি হাটে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। আমাদের একাধিক টিম সড়কে নিরাপত্তার সার্বক্ষণিক কাজ করছে।’কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোরবানির হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।’
আপনার মতামত লিখুন :