
কানাডার রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনিতা আনন্দকে কানাডার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়েছে। ৫৮ বছর বয়সী লিবারেল পার্টির এই প্রবীণ নেত্রী এর আগে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি মেলানি জোলির স্থলাভিষিক্ত হলেন, যিনি শিল্পমন্ত্রী হিসেবে স্থানান্তরিত হয়েছেন।ব্যক্তিগত জীবনে অনিতা আনন্দ হিন্দু ধর্মের অনুসারী। গতকাল মঙ্গলবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গীতার ওপর হাত রেখে শপথ নেন তিনি। নতুনভাবে নির্বাচিত ২৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এই পরিবর্তন এনেছেন। মন্ত্রিসভায় এবারও অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্যের ভারসাম্য রাখা হয়েছে, যেখানে অর্ধেক সদস্যই নারী।
মার্ক কার্নি বলেন, ‘এই মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে কানাডিয়ানদের প্রত্যাশিত পরিবর্তন পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে, বিশেষ করে যখন কানাডা-আমেরিকা সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে।’
শপথ নেওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় অনিতা আনন্দ এক্স-এ লিখেছেন, ‘কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে আমি সম্মানিত। প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এবং আমাদের দলের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে আছি, যেন আমরা কানাডার মানুষের জন্য আরো নিরাপদ, ন্যায্য বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।’
কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ওকভিল এলাকা থেকে নির্বাচিত বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২০ মে।পূর্বাঞ্চলীয় নোভা স্কটিয়া প্রদেশের কেন্টভিল শহরে তার জন্ম হয়। তার মা সরোজ ডি রাম পাঞ্জাব এবং বাবা এস ভি আনন্দ তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে চিকিৎসক দম্পতি হিসেবে তারা কানাডায় অভিবাসী হন এবং সেখানে পরিবার গড়ে তোলেন।১৯৮৫ সালে অনিতার পরিবার নোভা স্কটিয়া থেকে অন্টারিও প্রদেশে চলে আসে এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। অনিতা অন্টারিওর এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।এরপর তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে, যেখানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে (জ্যুরিসপ্রুডেন্সে) অনার্স ডিগ্রি নেন। পড়াশোনা এখানেই থেমে থাকেনি। দেশে ফিরে এসে তিনি ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন আইন, শিক্ষকতা ও জনসেবা খাতে, যার পথ ধরেই তিনি রাজনীতিতে উঠে আসেন। আজ তিনি শুধু কানাডার একজন শীর্ষ রাজনীতিবিদই নন, বরং বহুসাংস্কৃতিক সমাজে একজন অনুপ্রেরণাদায়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী নেত্রীর প্রতিচ্ছবি।
২০২৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনে জয়লাভের পর অনিতা হাউস অফ কমন্সে ওকভিল ইস্ট রাইডিং-এর প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি এর আগে ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত হাউস অফ কমন্সে ওকভিল রাইডিং-এর প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং জনসেবা ও ক্রয় মন্ত্রী, জাতীয় প্রতিরক্ষা, পরিবহন ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য মন্ত্রী, ট্রেজারি বোর্ডের সভাপতিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পোর্টফোলিওর দায়িত্ব পালন করেছেন।
সূত্র : এনডিটিভি
আপনার মতামত লিখুন :