
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালিত ৩৫টি ড্রেজার ও জলযান সংগ্রহ এবং অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগ অনুসারে, সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে বাড়ি-গাড়িসহ বৈধতা বিহীন সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগের অনুসন্ধানকালে আব্দুল মতিনের স্ত্রী-সন্তানের সম্পদসহ তার নিজস্ব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে সংস্থার সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে নথিপত্র চেয়ে যাচাই শুরু করেছেন। দুদকের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “প্রত্যেকটি নথি সংগ্রহের পর বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করে কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হবে, যার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং শাখার প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৫টি ড্রেজার, ১৬১টি জলযান সংগ্রহ, ৩টি ড্রেজার বেইজ নির্মাণ এবং একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সূত্রের দাবি, অর্থাৎ এই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়েছে।
আবদুল মতিন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তবে তার আয় ও পদোন্নতি অনুযায়ী অর্জনযোগ্য সম্পদের তুলনায় তার মালিকানাধীন সম্পদ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। রাজধানীর রামপুরা মৌলভীরটেকে তার পাঁচতলা বাড়ি, খিলগাঁওয়ের রিয়াজবাগ ও গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে এই সম্পদ অর্জন করা হয়েছে।
সূত্রে আরও জানা যায়, প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের ক্ষমতার উৎস হিসেবে ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান কাজ করেছেন। তাদের ছত্রছায়ায় আব্দুল মতিনসহ অন্যান্য নির্বাহী প্রকৌশলী অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু জাফরের মাধ্যমে ২০ জন প্রকৌশলী সরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, যা অর্থ লেনদেনের সঙ্গেও যুক্ত।
প্রকল্পটির মেয়াদ শুরু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন। নানা জটিলতার কারণে মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি এবং আরও সময় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি জনসম্পদের অপব্যবহার এবং সংস্থার সেবা প্রদান ব্যাহত করে। তাই অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত অনুসন্ধান চালানো এবং প্রমাণ সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
দুদকের অনুসন্ধান এখন চলছে এবং প্রকল্পের সকল নথি ও আর্থিক লেনদেন যাচাইয়ের পর কমিশন প্রমাণ সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে। এতে প্রকল্পের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং সংস্থার প্রতি জনমতের আস্থা বজায় থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :