• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

চেয়ারপারসনের আগমনে বিএনপিতে উচ্ছ্বাস


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
চেয়ারপারসনের আগমনে বিএনপিতে উচ্ছ্বাস

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা এবং পারিবারিক আবহে দীর্ঘ চার মাস অবস্থান শেষে মানসিক প্রশান্তি নিয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় প্রধান দেশে ফেরায় সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে।

ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে থেকে সাদা রঙের পাজেরো জিপে করে মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান বিএনপির চেয়ারপারসন। ভোর থেকেই গুলশানের বাসভবন ফিরোজার সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।বিমানবন্দর থেকে ফিরোজায় যাওয়ার সময় পথে পথেও খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।

 

সকাল সোয়া ১১টায় তিনি বিমানবন্দর থেকে সড়ক পথে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। কিলো দশেকের পথে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তার বাসায় পৌঁছাতে লেগে যায় ২ ঘণ্টারও বেশি সময়।

বেগম খালেদা জিয়া সাধারণত গাড়ির সামনের সিটে বসেন না।তবে আজ তিনি গাড়ির সামনের আসনে বসে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় আসেন। পথে পথে নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। পেছনের আসনে বসেন তার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরলেন জুবাইদা রহমান।

ফিরোজায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জুবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামান বিন্দু এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া বিএনপি নেত্রীর মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিক, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ছিলেন সেখানে। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। পরে কড়া নিরাপত্তার সঙ্গে বিমানবন্দর থেকে বের হন বিএনপির চেয়ারপারসন।

এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।এ সময় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।

 

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১১টা ২০ মিনিটে পৃথক একটি গাড়িতে উঠে হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে বের হয়ে বাসভবন গুলশানের দিকে রওনা হন তিনি। এ সময় সড়কের পাশে অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার নেতাকর্মী জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। বিএনপি নেত্রী গাড়ি থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।

এ সময় নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগত’, ‘খালেদা, জিয়া’, ‘তারেক রহমান’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে তাকে বহনকারী গাড়ি খিলক্ষেত, কুর্মিটোলা, নৌ সদর দপ্তর হয়ে ফিরোজায় পৌঁছায়।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেগম খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে ‘ফিরোজা’ সাজিয়ে গুছিয়ে পরিচ্ছন্ন করে আগেই পুরোপুরি প্রস্তুত করে রাখা হয়। ফিরোজায় ও তার সামনের সড়কে সেনা, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে রাখে। পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)’ সদস্যরা।

খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী বিমানবন্দর থেকে শুরু করে তার গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত ভিড় করেছেন। তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা। এ ছাড়া তারা জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত নানা ব্যানার-ফেস্টুন বহন করেন। এ সময় মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে চারপাশ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে প্রবেশের পর দুপুর আড়াইটায় সেখানকার মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুস্থ ও মানসিকভাবে দৃঢ় রয়েছেন। তার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করায় তিনি নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।’

এ ছাড়া ৭ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত লন্ডনে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (৫ মে) বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নাতনি জায়মা রহমান আবেগঘন পরিবেশে তাকে বিদায় জানান। এ সময় ছেলেকে দেখিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত বিএনপিকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ভাইয়াকে দেখে রেখো।’

পরে সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ বিমান (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর ত্যাগ করে। পথে কাতারের রাজধানী দোহায় যাত্রাবিরতি করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি। দোহা থেকে রওনা দিয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টার পর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অবতরণ করে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন থেকে আরো এসেছেন তার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদসহ ১৪ জন।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান।

সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।


Side banner
Link copied!