
রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকা জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের ছররা গুলিতে এক চোখ হারানো চার যুবক বিষপান করেছেন। গতকাল রবিবার দুপুরে এই ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
বিষপানকারী চার যুবক হলেন শিমুল, মারুফ, সাগর ও আখতার হোসেন (আবু তাহের)।তাদের একজন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে গতকাল এই হাসপাতালে ভর্তি হন।
এই চারজন জুলাই যোদ্ধার চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেলের মাধ্যমে তাদেরকে এই চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হবে।
রবিবার দিবাগত রাতে তারেক রহমানের নির্দেশে সংশ্লিষ্টদের খোঁজ-খবর নিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো চারজন এবং তাদের পরিবারের প্রতি তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেন তিনি।
এ সময় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন ও ড্যাবের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব ডা. আ.ন.ম মনোয়ারুল কাদির বিটু, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল, কেন্দ্রীয় ড্যাব নেতা ডা. মঞ্জুরুল আজিজ ইমন, ছাত্রদলের সাবেক সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. এম আর হাসান, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদল সভাপতি ডা. তাওহীদুল ইসলাম সৈকত, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ইমরান হোসেন, ছাত্রনেতা শিহাব, সিফাত এবং কেন্দ্রীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের দলের অসংখ্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল এই ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মিডিয়া হেড মো. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিষপানের সুনির্দিষ্ট কারণ নেই।তবে তারা এক ধরনের মানসিক ট্রমায় ভুগছিলেন।’
মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গত শনিবার কোনো এক ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি আহত যোদ্ধাদের কয়েকজন একজন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ও কয়েকজন চিকিৎসককে আটকে রেখেছিলেন। আমরা তাদের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, এ ধরনের কোনো কিছু যেন না হয়। হাসপাতালে যদি কোনো সমস্যা থাকে, সে বিষয় নিয়ে আমরা আগামীকাল এসে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে আজ দুপুরে আমিসহ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নতুন সিইও কর্নেল (অব.) কামাল আকবর হাসপাতালে যাই এবং পরিচালকের সঙ্গে সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলি।একই সঙ্গে নতুন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করি। সভা চলাকালে পরিচালকের কক্ষের বাইরে আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখি, চারজন বিষপান করে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা জানতে পারি, তারা একধরনের মানসিক ট্রমায় ভুগছিলেন। এর বাইরে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি।’
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, তেলাপোকা মারার তরল বিষ পান করেন তারা চারজন। বিষের পরিমাণ খুব বেশি না হওয়ায় কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি তাদের।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন সিইও কামাল আকবরের সঙ্গে আমার পূর্ব নির্ধারিত সভা ছিল। সেখানে আলোচনা হয় আহতদের পুনর্বাসন নিয়েই। কিন্তু এ সময়ে ১৫-২০ জন্য এসে রুমে প্রবেশ করে। তখন সিইও অনুরোধ জানান, “তোমরা বাইরে অপেক্ষা করো।” এরপর বাইরে গিয়েই চারজন বিষপান করেন। আহতদের দাবি ছিল, পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য কার্ড, গেজেট ইত্যাদি।’
ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ৫৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন সুস্থ আছেন। তাদের আর হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই। ৭-৮ জনের চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের কিছু সমস্যা রয়েছে।
পরিচালক বলেন, যারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই মানসিকভাবে ভালো নেই। তারা আশঙ্কা করছেন যে, যদি হাসপাতাল থেকে চলে যান, তাহলে তারা পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন সমস্যা এবং সংকটে পড়তে পারেন। তাই তারা হাসপাতাল ছাড়তে চাচ্ছেন না।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, বিষপানকারী রোগীগুলো এই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন না। দুদিন আগে হাসপাতালে এসেছেন নতুন করে। এর আগে তারা এখানে চিকিৎসাধীন ছিল ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। দু’দিন আগে তারা নিজেরাই এসে ভর্তি হয়েছেন রাত ৯-১০টার দিকে।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো আহত ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ ৯ মাসেও তাদের উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানা বাহানা করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিত্সা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললেও তা বাস্তবে ঘটেনি।
আপনার মতামত লিখুন :