• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শরীয়তপুরে পুলিশ সুপারের সততার কারণে ঘুষ ছাড়াই পুলিশের চাকরি পেল ৪৪ জন


FavIcon
নুরুজ্জামান শেখ, শরীয়তপুরঃ
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৩, ১২:১৮ পিএম
শরীয়তপুরে পুলিশ সুপারের সততার কারণে ঘুষ ছাড়াই পুলিশের চাকরি পেল ৪৪ জন
ছবি - সংগৃহীত

শরীয়তপুরে পুলিশ সুপারের সততার কারণে মেধার যোগ্যতায় ঘুষ ছাড়াই মাত্র ১২০ টাকা অফিসিয়াল খরচ করে বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরি পেয়েছেন  জেলার ৪৪ জন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। কোনো ধরনের দালালি বা সুপারিশ ছাড়া নির্বাচিত হতে পেরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রার্থীরা। স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৪৪ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে জেলা পুলিশ। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬ জন, পোষ্য কোটায় ৩ জন, আনসার কোটায় ৩ জন, মহিলা কোটায় ৫ জন এবং সাধারণ কোটায় ২৭ জন। নির্বাচিত হয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পুলিশ সুপার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান অনেকেই।

চাকরি পাওয়া এক কৃষকের ছেলে বলেন, আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি ১২০ টাকার বিনিময়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদের এ চাকরি পাব। গত বছরও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমি উত্তীর্ণ হতে পারিনি। কিন্তু আশা ছাড়িনি। যখন আবেদন করেছিলাম তখন অনেকের কাছে অনেক কথাই শুনেছি। তদবির লাগে, টাকা লাগে। এসব ছাড়া চাকরি হয় না। আমার বাবা একজন কৃষক। আমি টাকা দেব কীভাবে। কিন্তু মনের জোরে এবং শরীয়তপুর পুলিশ সুপার মো: সাইফুল হক স্যারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকায় আমি নির্বাচিত হয়েছি। এজন্য আমি পুলিশ সুপার স্যারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

চাকরি প্রাপ্ত মেয়ে প্রার্থী বলেন, আমি পুলিশে দাড়ানোর পূর্বে অনেকেই বলেছিল, পুলিশে চাকরি নিতে ১০'লক্ষ টাকা লাগে। কিন্তু আমি মেধার যোগ্যতায় মাত্র ১২০ টাকায় চাকরি পেয়েছি। যোগ্যতা ও মেধা যাচাই করে চাকরি দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারসহ নিয়োগবোর্ডে থাকা পুলিশের সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

জিপিএ-৫ পাওয়া এক প্রার্থী বলেন, আমি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এক সন্তান। আমার বাবা মারা গেছেন। আমি অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি এবং কনস্টেবল পদের জন্য আবেদন করি। মনের জোর ও পুলিশ সুপারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে আমি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হতে পেরেছি এবং পরীক্ষায় ১ম হয়েছি। চাকরি করে দেশের সেবা করবো। সুযোগ পেলে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাব।

শরীয়তপুরে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল হক বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ০২ মার্চ পর্যন্ত মোট ৭টি ইভেন্টে ১ম পর্বে ৩১৮ জনকে শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৯৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। পরে ১৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হন ৪৪ জন। তিনি জানান, পুলিশে নিয়োগ পেতে ব্যাংক ড্রাফট বাবদ ১০০ টাকা ও অনলাইন চার্জ ২০ টাকাসহ মোট ১২০ টাকা খরচ হয়েছে প্রার্থীদের। এদের মধ্যে অনেকে কৃষক, ভ্যানচালক, অটোচালক, এতিম এবং কেউ দিনমজুরের ছেলে রয়েছেন। মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষে তাঁদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, কোনো ধরনের তদবির তোয়াক্কা না করে যে সব প্রার্থী শারীরিকভাবে যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন, যাঁরা সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন শুধু তাঁদেরকেই নির্বাচিত করেছি। শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে মেধা ও যোগ্যতাভিত্তিক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা সতর্ক ছিলাম।

নিয়োগবোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলাল উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর হায়দার শাওনসহ প্রমূখ কর্মকর্তাগণ।
 


Side banner
Link copied!