• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষন : ধামাচাপা দিতে বিয়ে : অতপর হত্যার হুমকি


FavIcon
মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২০, ০৬:৩৯ পিএম
প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষন : ধামাচাপা দিতে বিয়ে : অতপর হত্যার হুমকি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষনের পর ধামাচাপা দিতে বিয়ে করে সটকে পড়েছে কিশোর নামের এক প্রতারক। এ ঘটনায় বাদী হয়ে ওই কলেজ ছাত্রী শ্রীমঙ্গল থায় মামলা করে উল্টো বিপাকে পড়েছেন। কিশোরের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ধর্ষিতার পরিবারকে।জানা গেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তরসুর গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামীর ছেলে কিশোর গোস্বামীর পাতানো ফাঁদে একটি গানের অনুষ্ঠানে কিশোর গোস্বামীর সাথে ২০১৯ সালে ধর্ষিতা কলেজ ছাত্রীর পরিচয় হয়। ওই সময়ে কিশোর গোস্বামী কলেজ ছাত্রীর মোবাইল নম্বর নিয়ে যায়। তারপর হইতে মোবাইলে এবং রাস্তাঘাটে নিয়মিত তার সাথে আলাপ-আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে কলেজ ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রতারক ও ধর্ষক কিশোর গোস্বামী বিভিন্ন ধরনের কথা বলিয়া মনকে নরম করিয়া ফেলে। এক পর্যায়ে কিশোরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০/২/২০১৯ ইং সকালে কিশোর গোস্বামী তাকে বেড়ানোর কথা বলিয়া বিটিআরআই পুলের নিচে নিয়া কথাবার্তার একপর্যায়ে কলেজ ছাত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে এবং ধর্ষনের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। এরপর কিশোর গোস্বামী ধর্ষনের দৃশ্য ইন্টারনেটে ছাড়িয়া দেওয়ার হুমকি দিয়া আমাকে জিম্মি করিয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। পরে কিশোর গোস্বামী ৯/০৫/২০১৯ ইং তারিখে ফুলছড়া চা বাগানের লাল টিলা কালিমন্দিরে নিয়া মন্দিরে থাকা পুরোহিতের মাধ্যমে আমাকে সিন্দুর পড়াইয়া বিবাহ করে।এর পর কিশোর গোস্বামী প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর দোহাই দিয়ে আমাকে ভোগ করিতে থাকে এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে ও পরে ঔষধ সেবন করাইত। সরল বিশ্বাসে এক পর্যয়ে কলেজ ছাত্রীর অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়লে কিশোর গোস্বামী প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শ্রীমঙ্গলের কলেজ রোডস্থ কেয়ার মেডিকেল সার্ভিসে ২৩/০৮/২০২০ ইং তারিখে নিয়া তাকে প্রকৃত নাম গোপন করিয়া মিস প্রিয়া নাম লেখাইয়া প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে। প্রেগন্যান্সি টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ায় কিশোর গোস্বামী জোরপূর্বক ঔষধ সেবন করাইয়া ২৫/০৮/২০২০ ইং তারিখে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে।সুচতুর কিশোর গোস্বামী জীবন যৌবন ধ্বংস্ব করিয়া সটকে পড়ার চেষ্টা করিলে কলেজ ছাত্রীর পিতাসহ স্থানীয় মুরুব্বিয়ান অসীম মজুমদার, গৌরাঙ্গ বণিক, পরিমল পাল গণদের মাধ্যমে কিশোর গোস্বামীর অভিভাবকগণকে নিয়া আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করেন। গত ২৭/০৯/২০২০ তারিখে উভয় পক্ষের লোকজন অসীম মজুমদার বাসায় সালিশ বৈঠকে বসার কথা থাকলেও তাহারা সালিশে বসে নাই।পরবর্তীতে ৪/১০/২০২০ তারিখে কিশোর গোস্বামী শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় এর অফিসে সালিশে বসেন। সালিশ চলা অবস্থায় উদনারপাড় গ্রামের আব্দুল কাদিরের পুত্র ফরিদ মেম্বার চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়কে মোবাইল করিলে চেয়ারম্যান উত্তেজিত মনোভাব প্রকাশ করিয়া পরদিন অর্থাৎ ৫/১০/২০২০ ইং কলেজ রোডস্থ কালী বাড়ীতে সালিশে বসবেন বলে জানান।গত ৫/১০/২০২০ ইং তারিখ কালিবাড়ী মন্দিরে সালিশ বসে। উক্ত সালিশে ছেলের পক্ষে চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, ডা. হরিপদ রায়, অবিনাশ আচার্য্য, ভৈরববাজারের গৌরা বাবু, জহর তরপদারসহ আমরা ও পূজা কমিটির লোকজন এবং ধর্ষিতার পক্ষে তার বাবা ও অসীম মজুমদার, গৌরাঙ্গ বণিক, পরিমল পাল সহ ছেলের পক্ষের সালিশকারীরা সালিশে বসেন। ধর্ষিতার পরিবারের কোন কথা না শুনিয়া ছেলে উঁচু বর্ণের কারণে তাহাকে গুরুত্ব দিয়া ধর্ষিতার পরিবারকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ক্রমে ৭২ ঘন্টার মধ্যে গর্ভ নষ্ট করার প্রমাণ দিতে বলা হয়। ধর্ষিতার পক্ষে গর্ভ নষ্ট করার প্রমাণ সহ সবকিছু দিতে পারবে বলে জানায়।এবিষয়ে দ্বিতীয় দফা ডাঃ হরিপদ রায় এর বাসায় সালিশে বসে। ওই সালিশে কলেজ ছাত্রীকে কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রত্যাখান করে।সুষ্টু বিচার না পেয়ে গত ১৪/১০/২০২০ ইং তারিখে আমার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কিশোর গোস্বামীর বাড়ীতে যাইয়া গেইটের সামনে কলেজ ছাত্রী অনশন করে। অনশনরত অবস্থায় রাত ৯.৩০ ঘটিকার সময় চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় শ্রীমঙ্গল থানার ওসি অপারেশন সোহেল রানা সহ আরো অনেকে যাইয়া কলেজ ছাত্রীকে ১৬/১০/২০২০ ইং তারিখ শুক্রবারের মধ্যে সমস্যা সমাধান করে দিবেন বলিয়া জানাইলে কলেজ ছাত্রী তাহাদের কথা বিশ্বাস করে অনশন ছেড়ে চলে আসে। শুক্রবার আসার পর জানিতে কলেজ ছাত্রী জানিতে পারে ছেলের বাবা অসুস্থ তাই সালিশ হবে না। ধর্ষিতার পিতা নিরুপায় হইয়া ট্রাক শ্রমিক পরিবহন সভাপতি নুরু মিয়া এবং সম্পাদক শাহজাহান সহ থানায় যাইয়া অফিসার ইনচার্জকে বিস্তারিত অবগত করেন। তখন এ বিষয়ে একটি জি.ডি করা হয় এবং বিষয়টি মিমাংসা করিয়া দিবেন বলিয়া জানান। কয়েকদিন অপেক্ষা করার পরও কোন কিছু সমাধান না হওয়ায় কলেজ ছাত্রী পুণরায় ৩০/১০/২০২০ ইং তারিখে নিজ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কিশোর গোস্বামীর বাড়ী যায় এবং বারান্দায় অবস্থান করে। ঐদিন বাড়ীতে উপস্থিত ছিলেন ছেলের মাসি ও দিদা। উনারা কলেজ ছাত্রীর সাথে খারাপ আচরন করেন।উক্ত বাড়ীতে অবস্থানকালে শ্রীমঙ্গল থানার দারোগা আল-আমিন এবং এক মহিলা পুলিশ সহ কয়েকজন যাইয়া কলেজ ছাত্রীকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়া জোরে টানা-হেঁচড়া করে ওই বাড়ী হইতে বাহির করার চেষ্টা করেন। কলেজ ছাত্রী চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। তখন দারোগা আল-আামিন রাগান্বিত সুরে মিস বিহেভ করেন। পরে গত ৩১/১০/২০২০ ইং তারিখে থানা কর্তৃপক্ষ আসামীগণকে গ্রেপ্তার করিবেন বলিয়া একটি কাগজে আমার দস্তখত নিয়ে তাহাদের মনগড়া কথা বলিয়া থানায় মামলা রেকর্ড করেন। মামলা রেকর্ডের পরদিন ১/১১/২০২০ ইং তারিখে কলেজ ছাত্রীকে ডাক্তারী পরীক্ষার কথা বলিয়া মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।ধর্ষিতা জানান, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কোন খোঁজ খবর নেননি। ডাক্তারী পরীক্ষা কারণ হিসেবে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করিলে ডাক্তার, নার্স মিস বিহেভ করেন। কালক্ষেপন করে ডাক্তারী পরীক্ষা করিয়া ৫/১১/২০২০ ইং তারিখে ধর্ষিতাকে ছাড়পত্র দেন। কলেজ ছাত্রী বাড়ীতে আসিয়া মামলার কপি পড়িয়া বুঝিতে পারেন, পুলিশ আসামীগণকে বাঁচানোর জন্য দায়সারা মামলা রেকর্ড করেছেন।কলেজ ছাত্রীর পরিবার জানান, একজন হিন্দু ধর্মের মেয়ে। আমাদের হিন্দু সমাজের উঁচু তলার মানুষেরা অর্থাৎ চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় সহ আমরা ও পূজা কমিটির লোকজন আসামীপক্ষে থাকার কারণে পুলিশ কলেজ ছাত্রীর মামলার আসামীকে গ্রেপ্তার করেন নাই বা সঠিকভাবে মামলা রেকর্ড করেন নাই।বর্তমানে বিভিন্ন লোকজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্ষিতা ও তার পরিবারবর্গকে মামলা তোলে নেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করছে এবং ফরিদ মেম্বার প্রকাশ্যে কলেজ ছাত্রীর বাবাকে বিভিন্নভাবে মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি প্রদান করছে। এ ছাড়াও ফরিদ মেম্বার কলেজ ছাত্রী ও তার বাবাকে টাকা পয়সা নিয়া আপোষ করার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করছেন।ধর্ষিতা কলেজ ছাত্রী জানান, তারা তিন বোন, কোন ভাই নেই। সে অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। বড় বোন মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। ছোট বোন তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বাবা ট্রাক চালিয়ে সংসার ও আমাদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করছেন।১০ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেল করায় আসামি কিশোর গোস্বামী ও তার সহযোগী আশিদ্রন ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ফরিদ মিয়া আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বর্তমানে সুবিচার চেয়ে ধর্ষিতার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ধর্ষিতার পরিবার সরকারের বিভিন্ন মহলের কাছে দাবী করছেন, মামলাটি পি.বি.আইর নিকট হস্তান্তর করে তদন্ত করার জন্য।

 


Side banner
Link copied!