
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বিভিন্নভাবে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার হলেও নানা সময় নেতিবাচক কাজে ব্যবহৃত হয়। আর না বুঝেই ফেসবুকের মাধ্যমে গুজবসহ বিভিন্ন কমেন্ট শেয়ার করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে ছোট ছোট অনেক ঘটনা বৃহৎ আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় স্কুল-কলেজে ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। এটা নিঃশন্দেহে অনেক ভালো উদ্যোগ। আরো আগেই স্কুল-কলেজে ফেসবুক নিষিদ্ধের এ নীতিমালা দরকার ছিল। শিক্ষার্থীদের শারীরিক আঘাত বা মানসিকভাবে বিপর্যয় করা, অশালীন বা অসৌজন্যমূলক আচরণ অর্থাৎ স্কুল ‘বুলিং’ (বলপ্রয়োগ বা ভয় দেখিয়ে কাউকে কিছু করতে বাধ্য করা) থেকে সুরক্ষা দিতে সরকার যে নীতিমালা করতে যাচ্ছে, সেখানেই এসব বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নীতিমালা প্রায় চ‚ড়ান্ত। শিগগিরই এটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে।
শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের সাথে মূল্যবোধ শেখানোর দিকে বেশি নজর দিতে হবে। এছাড়া স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও নৈতিক আদর্শবোধ অর্জনের গুরুত্ব এবং ধারণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি করা জরুরি। ইন্টারনেট সমগ্র পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোই এনে দিয়েছে। ইন্টারনেটে অনেক ভাল দিক রয়েছে যা ব্যবহারের ফলে আমাদের জানার পরিধি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এর খারাপ দিক মোটেই উপেক্ষা করার মত নয়।
খসড়া নীতিমালায় ‘স্কুল বুলিং’ বলতে বোঝানো হয়েছে, স্কুল চলাকালীন সময় বা শুরুর আগে ও পরে, ক্লাস রুমে, স্কুলের ভেতরে, প্রাঙ্গণে বা স্কুলের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী দ্বারা অন্য শিক্ষার্থীকে শারীরিক আঘাত করা বা মানসিক বিপর্যয় করা, অশালীন বা অপমানজনক নামে ডাকা, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা, কোনো বিশেষ শব্দ বারবার বলে উত্ত্যক্ত বা বিরক্ত করাকে স্কুল বুলিং হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও নীতিমালায় আইসিটি ডিভাইস বহন, ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী এই নীতিমালা ভঙ্গ করলে তাকে বহিষ্কারের প্রস্তাবও করা হয়েছে নীতিমালায়।
অভিভাবকদের করণীয় বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সন্তানকে স্কুলের নিয়ম-কানুন মেনে চলা, অন্যান্য শিক্ষার্থী বা বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সন্তানকে সর্বোচ্চ ভালোবাসার মধ্য দিয়ে লালন-পালন করতে হবে। তাদের মধ্যে মূল্যবোধ শেখাতে হবে, যাতে তারা বুলিংকারী (উৎপীড়ক) না হয়ে ওঠে। নিজ সন্তান বুলিংকারী বা বুলিংয়ের শিকার যাই হোক না কেন, পূর্বাপর কিছু না জেনে সন্তানদের সামনে অভিভাবকদের ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বুলিংকারী শিক্ষার্থীর ব্যাপারে স্কুল কোনো পদক্ষেপ নিলে অভিভাবকরা তার বিরোধিতা না করে স্কুলকে সহযোগিতা করার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে।
আনন্দ-ফুর্তি করা যাবে কিন্তু তা অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হতে হবে। যে আনন্দ অন্যের অধিকার, শান্তি, সতীত্বকে কেড়ে নেয় এমন সংস্কৃতি ও মদ, জুয়া, অশ্লীলতা কোন ধর্মেই গ্রহণীয় নয়। বিভিন্ন সাইবার ক্যাফের উপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যে সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে অথবা খেলার মাঠে থাকার কথা, অথচ সে সময়ে তারা নিমগ্ন থাকছে ইন্টারনেটে। তারা যেসব সাইট ব্রাউজ করছে তার বেশিরভাগই পর্নোসাইড। এ পরিস্থিতি আমাদের দেশের জন্য, আগামী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে, আমাদের সমাজ কাঠামোর জন্যে ভয়াবহ অভিশাপ ও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যদি আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই তবে আমাদের সন্তান, শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজকে অবশ্যই নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :