শরীয়তপুর জেলা শহরসহ ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু স্পটে মাদক বেচাকেনাসহ ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এতে করে বাড়ছে চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। পুলিশের দায়সারা অভিযান।
শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন থানা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুর উপজেলার সদরের পালং স্কুল রোড, সাবনুর মার্কেট, বিলাশ খান, প্রেমতলা বাগিয়া, পাকার মাথা, আটিপাড়া, পৌর ঈদগা রোড, সদর উপজেলার মনোহর বাজার, বুড়িরহাট, গঙ্গানগর বাজার, শৌলপাড়া বাজার, চিকন্দী বাজার, নড়িয়া উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পরিত্যক্ত বাসভবন, কাঞ্চনপাড়া বাজারের দক্ষিণ মাথা, পঞ্চপল্লি গুলমাইজ মোড়, পাঁচক বউবাজার, পাগলার মোড়, চাকধ বাজার, সুরেশ্বর বাংলাবাজার, চন্ডিপুর লঞ্চঘাট, চান্দনী দুলুখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে, কার্তিকপুর বাজার মাদক বেচা-কেনার স্পট হয়ে উঠেছে।
এ ছাড়া ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলু বাজার ফেরিঘাট, সখিপুর, ডি এম খালী, তারাবুনিয়া, কাসেম বাজার, চরকুমারিয়া বাজার, সত্যপুর বড় ব্রিজ, গোসাইরহাট উপজেলার ধীপুর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকা, চর জুসির গাও, চর ধীপুর, নতুন বাজার, নাগের পাড়া বাজার, আনন্দ বাজার, গোসাইরহাট খাদ্যগুদাম এলাকা, দাশের জঙ্গল, বিনটিয়া, মহেশ^রপট্ট্রি, মাসুয়া খালি, সামন্তসার, জাজিরার টিএনটি মোড়, হেলিপেড রোড, মাঝিরঘাট, কাজিরহাট, বিলাশপুর বাজার, সফিকাজির মোড় এবং ডামুড্যা উপজেলায় হাসপাতাল রোড, ডামুড্যা বাজার ধান হাটা, খাদ্য গুদাম রোডসহ বহু স্পটে মাদক বেচা কেনা হচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সন্ধ্যা বা দিনের বেলায় এসব স্পটে মাদক বেচাকেনা চলে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক অসাধু নেতা-কর্মী জড়িয়ে পড়ছে। পাশের চাঁদপুর জেলা থেকে বিভিন্ন পরিবহন করে ও নৌ-যান দিয়ে ভেদরগঞ্জের আলু বাজার ফেরি ঘাট দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা শরীয়তপুর সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া বরিশাল থেকে আবু পুর ফেরি ঘাট ও কুচাই পট্টি এলাকা দিয়েও দেদারসে মাদক আসছে শরীয়তপুর জেলায়।
সস্প্রতি ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানা পুলিশ বালার হাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদারীপুর শিবচর এলাকার খোকন বেপারী (৩৫), নুরুজ্জামান বেপারী (৪০) মিজানুর রহমান মোল্ল্যাকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে ২৬ কেজি গাঁজাসহ।
এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলার আতাউর রহমান, আলি হোসেন ও জলিল সরদার বলেন, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরাধীরা প্রকাশ্যে এলাকায় অবস্থান করছে।
প্রতিদিনই বাঁশতলা মোড়, বৈশাখী পাড়া, চান্দনী, বাড়ৈ পাড়া এলাকায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনা দেখা যায়। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে মাদক ব্যবসায়ীদের দমনের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীরা।
গোসাইরহাট উপজেলার নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাজনৈতিক নেতা বলেন, এখানে কিছু অসাধু নেতাকর্মী মাদক ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কিন্তু প্রশাসন তাদের কিছু বলে না।
ভেদরগঞ্জ তারাবুনিয়ার এলাকার মাহাবুবু খান, আলী বেপারী বলেন, মাদকাসক্তদের উৎপাতে এলাকায় তাদের বসবাস করাই দায় হয়ে পড়েছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জজ কোর্টের আইনজীবী ও চিকন্দী আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান তালুকদার বলেন, শরীয়তপুরে নেশাগ্রস্তদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নেশার খরচ যোগানোর জন্য নানারকম সমাজবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
সখিপুর থানার ওসি ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, “আমরা কয়েক দফা মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছি। এতে আমরা কিছু গাঁজাসহ একজন ‘মাদক ব্যবসায়ীকে’ আটক করে কোর্টে প্রেরণ করেছি।
নড়িয়া থানার ওসি মো: নাজমুল হাসান বলেন, নড়িয়া থানায় মাদকের ব্যাপক ছড়াছড়ি। আমরা গত দু”মাসে ২৬টি মামলা দিয়েছি। নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে মাদক কারবারিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: বোরহান উদ্দিন বলেন, গত ৭ দিনে আমরা মোবাইল কোটের মাধ্যামে বিভিন্ন মাদক কারবারি ও সেবিদের ৫২ হাজার ৫ শত টাকা জড়িমানা করেছি। ৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রধান করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :